জাকার্তার সেনায়ন স্টেডিয়াম। ফ্ল্যাশব্যাকে যেতে হবে ১৯৬২’র ৪ সেপ্টেম্বর। এশিয়ান গেমসের ফাইনালে শক্তিশালী দক্ষিণ কোরিয়ার মুখোমুখি ভারত। গ্রুপ লিগে যাদের কাছে দু’গোলে হেরেছিলেন অরুণ ঘোষ-জার্নেল সিংরা। স্বাভাবিকভাবেই ফাইনালে আন্ডারডগ হিসেবেই নেমেছিল ভারত। ম্যাচের আগে প্রিয় শিষ্য প্রদীপ কুমার ব্যানার্জির (পিকে) কাছে কোচ সৈয়দ আবদুল রহিম বলেছিলেন, ‘তোমাদের কাছে শেষ উপহার চাইছি। এশিয়ান গেমসের সোনার পদক আমায় দাও।’ কোচের এই অনুরোধ উদ্দীপ্ত করেছিল পিকে-চুনী-বলরামদের। ১৭ মিনিটে পিকে’র গোলেই লিড নেয় ভারত। মিনিট তিনেক বাদে ব্যবধান বাড়ান জার্নেল সিং। ২-০ গোলে দক্ষিণ কোরিয়াকে হারিয়ে এশিয়ান গেমস ফুটবলে সোনা জিতেছিল চূনী গোস্বামীর নেতৃত্বাধীন ভারত। মিলেমিশে একাকার কোচ রহিম সাহেবের চাওয়া-পাওয়া।
১৯৫০ থেকে ১৯৬৩, ভারতীয় দলের কোচ ছিলেন রহিম সাহেব। তিনিই এ দেশের সর্বকালের সেরা কোচ। এবার তাঁকে নিয়েই বায়োপিক তৈরির কাজে হাত দিয়েছেন ‘বধাই হো’ খ্যাত পরিচালক অমিত শর্মা। সম্প্রতি ছবির মূলধন সংগ্রহের জন্য কলকাতায় এসেছিলেন তিনি। দেখা করেন পিকে ব্যানার্জির সঙ্গে। এদিন এই কিংবদন্তি ফুটবলার তথা কোচ বলেন, ‘এশিয়ান গেমসের সময় রহিম সাহেব ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন। মাঝেমধ্যেই রক্তবমি হত। আমাদের আড়ালে বাথরুমে ঢুকে বমি করতেন। আয়ু যে শেষ হয়ে আসছে তা সম্ভবত উনি বুঝতে পেরেছিলেন। তাই ফাইনালের আগে আবেগমথিত কণ্ঠে সোনা চেয়েছিলেন আমাদের কাছে। ওঁকে তোফা দিতে পেরে আমি খুশি।’ উল্লেখ্য, ১৯৬৩’র ১১ জুন প্রয়াত হন এশিয়ান গেমসে সোনাজয়ী ভারতীয় দলের কোচ। গোল করার দুরন্ত ক্ষমতার জন্য পিকে’কে ওস্তাদ বলে ডাকতেন রহিম সাহেব। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে পিকে ব্যানার্জি জানালেন, ‘দক্ষিণ কোরিয়াকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর রহিম সাহেবকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। আমিই শেষে ওঁর সন্ধান পাই। ক্যানসারের যন্ত্রণা ভুলে প্রিয় ওস্তাদকে বুকে জড়িয়ে ধরেছিলেন উনি। সেই ঘটনা এখনও চোখ বন্ধ করলে দেখতে পাই। ফুটবল খেলে যা সম্মান পেয়েছি তার নেপথ্যে রহিম সাহেবের অবদান অনস্বীকার্য।
পাঁচের দশকে আমার বাবা প্রয়াত হন। সেই সময় দারুণ আর্থিক অনটন ছিল সঙ্গী। দিনে দু’বার খাবার সামর্থ ছিল না। তা বুঝতে পেরে উনি টাকা দিয়েছিলেন। হায়দরাবাদ ক্যাম্প থেকেই পুত্রস্নেহে আমায় কাছে টেনে নেন। শুধু কোচ নয়, মানুষ হিসেবেও রহিম সাহেব অতুলনীয়। সেই সময়েই আধুনিক কোচিংয়ে বিশ্বাস করতেন। বারবার আমাদের বলতেন, জমিতে পাস খেলে পজেশন ধরে রাখতে। বলতে কোনও দ্বিধা নেই, রহিম সাহেবের শিক্ষাই আমাদের পরিণত করে তুলেছিল। তাই ওঁর বায়োপিক তৈরি হওয়ায় আমি রোমাঞ্চিত। আশা করি, দর্শকদের এই মুভি ভালো লাগবে।’
১৯৬২ এশিয়ান গেমসে সোনাজয়ী ভারতীয় ফুটবল দল
গোলরক্ষক: পিটার থঙ্গরাজ, প্রদ্যোৎ বর্মণ।
ডিফেন্ডার: ও চন্দ্রশেখর, জার্নেল সিং, ত্রিলোক সিং, অরুণ ঘোষ,
ডিএমকে আফজল।
হাফ ব্যাক: ফ্র্যাঙ্কো, রাম বাহাদুর, প্রশান্ত সিংহ।
ফরোয়ার্ড: প্রদীপ কুমার ব্যানার্জি, চুনী গোস্বামী (অধিনায়ক), তুলসীদাস বলরাম, এথিরাজ, ইউসুফ খান, অরুময়নৈগম।
কোচ: সৈয়দ আবদুল রহিম।
(সংগৃহীত)