এন্তার প্রচার করে, ঢাক ঢোল পিটিয়ে নিম্ন বিত্ত পরিবারের মহিলাদের জন্য উজ্জ্বলা প্রকল্পের সূচনা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। উনুনে কাঠ আর কয়লার ধোঁয়ার ভোগান্তি থেকে মহিলাদের মুক্ত করতে বিনামূল্যে গ্যাস সিলিন্ডার রান্নাঘরে পৌঁছে দেওয়াটাই ছিল এই প্রকল্পের লক্ষ্য। ২০১৬ সালে চালু করা এই প্রকল্পকে হাতিয়ার করে ২০১৯ র ভোটে মহিলাদের বিপুল সমর্থনও জুটিয়ে নেয় গেরুয়া শিবির। যদিও মোদী জমানায় গ্যাসের দাম এখন রকেট গতিতে। উজ্জ্বলা প্রকল্পে পাওয়া গাসের ওভেন বস্তাবন্দি হয়ে পড়ে আছে। বিনামূল্যে তো দূরের কথা, ভর্তুকিও মিলছে না গ্যাসে। দামের উর্ধ্বগতির জেরে কানেকশন থাকলেও, গ্যাস কিনতে পারছেন না নিম্নবিত্তরা। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে উজ্জ্বলা প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত গ্রাহকদের জন্য বরাদ্দ গ্যাস সিলিন্ডার কালোবাজারে বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। ইতিমধ্যে গোটা রাজ্য থেকে এহেন প্রচুর গ্যাস সিলিন্ডার বাজেয়াপ্ত করেছে রাজ্য পুলিসের এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ।
ইবি সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, তাদের কাছে খবর আসছিল ডোমেস্টিক গ্যাস সিলিন্ডার কালোবাজারে বিপুল দামে বিক্রি হচ্ছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা চক্র গড়ে এই কাজ চালাচ্ছে। এগুলি ব্যাবহার করা হচ্ছে পাড়ার রোল-চাউমিনের দোকানে। এমনকী ইন্ডাস্ট্রিয়াল কাজেও ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু ডোমেস্টিক গ্যাস সিলিন্ডার বাজারে এভাবে বিক্রি হওয়ার কথা নয়। এই নিয়ে দ্রুত তদন্ত শুরু করে ইবি। চন্দননগর থানায় এই নিয়ে প্রথম কেসটি হয় গত মার্চ মাসে। উদ্ধার হয় ন’টি এলপিজি সিলিন্ডার। এরপর মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে গাইঘাটা, ডানকুনি, ইসলামপুর, মাটিগাড়া সহ রাজ্যের মোট ১২ টি থানায় এই সংক্রান্ত কেস হয়। বাজেয়াপ্ত করা হয় মোট ১৮০টি ডোমেস্টিক গ্যাস সিলিন্ডার। এখনও খানা-তল্লাশি চলছে। ইবি সূত্রে জানা গিয়েছে, কেসের সংখ্যা আরও বাড়বে। করোনা পর্বে বিধিনিষেধ আরোপিত হওয়ার পর এই ব্যবসার রমরমা বেড়েছে। এক একটি সিলিন্ডার বিক্রি করা হয়েছে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকায়।
ইবি আধিকারিকরা প্রাথমিকভাবে জানতে পারছেন, সিলিন্ডারগুলি সবই উজ্জ্বলা প্রকল্পের গ্রাহকদের। তদন্তে উঠে আসছে, এই প্রকল্পের গ্রাহকদের কাছ থেকে গ্যাসের বই থেকে শুরু করে সমস্ত নথি নিচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। মামলার তদন্তে নেমে এহেন প্রচুর নথিপত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে আবার কালোবাজারিতে যুক্ত ব্যবসায়ীরা গ্রাহকদের দিয়েই গ্যাস বুক করাচ্ছে। গ্যাসের দামও মেটাচ্ছে তারা। তবে এই কারবার বন্ধ করতে কড়া পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে ইবি। বিভিন্ন জায়গায় নজরদারি শুরু হয়েছে। অফিসারদের সক্রিয়তায় এই কারবার কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলেই খবর।