বাংলায় একুশের বিধানসভা ভোটে মুখ থুবড়ে পড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের বিষয়টি উঠে আসছে বিজেপির অভ্যন্তরীণ সমীক্ষায়। প্রায় অনেককেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা দেওয়া এবং সেই আধা সেনার বহর নিয়ে প্রচারে বের হওয়াটা, আম জনতা ভালো ভালো চোখে দেখেনি বলেই খবর পৌঁছেছে গেরুয়াশিবিরের দিল্লীর কর্তাদের কাছে।
প্রসঙ্গত, মানুষের সাথে সরাসরি জনসংযোগের পরিবর্তে কেন্দ্রীয় জওয়ান দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে ভোটারদের থেকে কার্যত দূরে সরে গিয়েছেন বিজেপির নেতা এবং টিকিট প্রাপকরা। নিরাপত্তা প্রাপক অনেকে আবার জওয়ান পরিবেষ্টিত হয়ে বাজার-দোকানও করেছেন। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানকে কার্যত নিজের প্রজার মতোও ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে অনেকের বিরুদ্ধে। বিধানসভা ভোটে ফল খারাপ হওয়ার এটাও একটা কারণ। এই পরিস্থিতিতে এবার কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা পাওয়ার বিষয়টি আরও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করে দেখা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরই পাশাপাশি কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখার খরচ জোগাতে অনেককেই পার্টির তরফে ভর্তুকি দিতে হয়েছে। বিস্তর খরচও হয়েছে পার্টির কেন্দ্রীয় ভাঁড়ার থেকে। কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী পান, এমন বেশ কয়েকজনকে ক্যাটাগরি অনুযায়ী গাড়িও সরবরাহ করতে হয়েছে রাজ্য সরকারকে।
উল্লেখ্য, ভোটের সময় রাজ্য বিজেপির ১৬৮ জন নেতা, এমপি, এমএলএ এবং টিকিট প্রাপক কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা পেতেন। কিন্তু বাহিনীর নিয়ে জনমানসে তৈরি হওয়া অসন্তোষ দেখে প্রায় ১০০ জন নেতা-নেত্রীর কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা তুলে নিল দিল্লী। গত দু’বছর ধরে বঙ্গ বিজেপি’র কোর গ্রুপ এর ১৫ থেকে ২০ জন কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা পাচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দিলীপ ঘোষ, রাহুল সিনহা, জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো, শান্তনু ঠাকুর প্রমুখ। পাশাপাশি সদ্য নির্বাচিত জনা পঞ্চাশ বিধায়ককেও কেন্দ্রীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে বিজেপি। এখন বিজেপি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, লাগামছাড়া কাউকেই আর কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা দেওয়া হবে না।
এ বিষয়টি স্বীকার করেছেন দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। চলতি মাস থেকে প্রায় ১০০ বেশি কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা প্রাপকের কাছ থেকে তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। দলীয় সূত্রে খবর, কেন্দ্রীয় বাহিনী আর থাকবে না এই খবর জানাজানি হওয়ার পরই একাধিক এমপি এবং বিধানসভার প্রার্থীরা আগেভাগে নিরাপত্তারক্ষীদের ছেড়ে দেন। কারণ তারা জানতেন, জুন মাসের গোড়া থেকে স্বাভাবিক নিয়মেই তা প্রত্যাহৃত হবে। বরং নিজেদের সংবাদ শিরোনামে আনতে কয়েকজন এমপি এবং অভিনেতা-অভিনেত্রী নিরাপত্তারক্ষী ছেড়ে দেওয়ার মিথ্যা প্রচার ফলাও করে করেছিলেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে।