মোদী-শাহ-নাড্ডার যাবতীয় প্রতিশ্রুতি যে মিথ্যা ছিল সেটা এবার বেশ ভালো ভাবেই বুঝে গেলেন বাংলার মতুয়া সমাজের মানুষেরা। তাঁরা এটাও বুঝতে পারলেন ২০১৯ সালে ও ২০২১ সালে বাংলার মতুয়ারা বিজেপিকে ঢেলে ভোট দিলেও বিজেপি তাঁদের সঙ্গে প্রতারণা ভিন্ন আর কিছুই করেনি। বিজেপি যে তাঁদের নাগরিকত্ব দেবে না সেটাই এবার সামনে চলে এসেছে কেন্দ্র সরকারের নয়া বিজ্ঞপ্তিতে। গতকাল কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে আসা অ-মুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য আবেদনপত্র চাওয়া হচ্ছে। আপাতত দেশের ৫টি রাজ্যের ১৩টি জেলায় বসবাসকারী তিন দেশ থেকে আসা অ-মুসলিম শরণার্থীরা অর্থাৎ হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন, খ্রিস্টান ও পার্সিরা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন জানাতে পারবেন। ওই পাঁচ রাজ্যের মধ্যে অবশ্য বাংলা নেই। অর্থাৎ বাংলায় বসবাসকারী বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দুদের যে আপাতত নাগরিকত্ব দেওয়ার কোনও ইচ্ছে নেই অমিত শাহের নেতৃত্বাধীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের, তা বিজ্ঞপ্তিতেই স্পষ্ট। আর এখানেই ক্ষোভ চড়েছে মতুয়াদের মধ্যে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করে দেশের পাঁচ রাজ্য গুজরাত, পঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান ও ছত্তিশগড়ের ১৩টি জেলায় বসবাসকারী বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে আসা অ-মুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন জানাতে বলা হয়েছে। পাঁচ রাজ্যের যে ১৩টি জেলার বসবাসকারী অ-মুসলিম শরণার্থীরা এই মহার্ঘ সুযোগ পাবেন, সেই জেলাগুলি হল পঞ্জাবের জলন্ধর, হরিয়ানার ফরিদাবাদ, রাজস্থানের ঝালোর, বারমের, সিরোহি, উদয়পুর, পালি, ছত্তিশগড়ের দুর্গ ও বালোদাবাজার এবং মোদি-অমিত শাহের খাসতালুক গুজরাতের মোরবি, রাজকোট, পাটন ও বদোদরা। তিন দেশ থেকে আসা অ-মুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে কাট-অফ পিরিয়ড রাখা হয়েছে ২০১৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর। অর্থাৎ ওই সময়ের মধ্যে যে সব হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, পার্সি ও জৈন বাংলাদেশ-পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ভারতে অনুপ্রবেশ করে ঘাঁটি গেড়ে বসেছেন তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।
বাংলায় থাকা মতুয়া ধর্মসমাজের মানুষের সংখ্যা প্রায় ৫০ লক্ষ। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বনগাঁ মহকুমা ও নদিয়া জেলার রানাঘাট মহকুমা এলাকায় মূলত এদের বসবাস। তবে এই দুই এলাকার বাইরেও রাজ্যের ৮০টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসবাস করেন বহু মতুয়া ধর্মসমাজের মানুষ। এরা প্রায় সবাই বাংলাদেশ থেকে অবৈধ ভাবে এদেশে চলে এসেছেন আর সেটাও কাট-অফ পিরিয়ড ২০১৪ সালের ১৪ ডিসেম্বরের অনেক আগেই। কেউ এসেছেন প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে, কেউবা জীবন ও জীবিকার তাগিদে। এরাই দীর্ঘদিন ধরে এদেশে বসবাস করার জেরে নাগরিকত্বের দাবি করে আসছেন। রাজ্যে কংগ্রেস বা বাম জমানায় এদের দাবি নিয়ে কেউ মাথা ঘামায়নি। পরিবর্তনের পরেও তৃণমূলের তরফেও এই নিয়ে বিশেষ উচ্চবাক্য করা হয়নি। বস্তুত তৃণমূলের এখনও দাবি, মতুয়ারা যেহেতু এদেশে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন, তাঁদের জমির পাট্টা দেওয়া হয়েছে, বাড়ি রেজিস্ট্রেশানের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে, যেহেতু তাঁদের নাম ভোটারলিস্টে আসছে, যেহেতু তাঁদের রেশন ও আধারকার্ড আছে তাই তাঁরা স্বাভাবিক ভাবেই এ দেশের নাগরিক।