গোটা দেশের মতো অতিমারির হাত থেকে মুক্তি পায়নি শিল্পশহরও। কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের জেরে সেখানে ফি দিনই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে এলাকার মানুষ স্থানীয় বিধায়ককে পাশে পাচ্ছে না বলে আগেই অভিযোগ উঠেছিল। এবার ঘূর্ণিঝড় যশে প্রায় গোটা হলদিয়া জলমগ্ন হওয়ার পরেও একই অভিযোগ উঠল সেখানকার বিজেপি বিধায়ক তাপসী মণ্ডলের বিরুদ্ধে।
প্রসঙ্গত, যশের জেরে হলদিয়া বিধানসভা এলাকার সিংহভাগ অংশ এখন প্লাবিত। অথচ সেখানকার বিধায়কের দেখা না মেলায় ক্ষুব্ধ হলদিয়ার মানুষ। সমুদ্র, নদীতে জলোচ্ছ্বাসে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বেশিরভাগ অংশ জলের তলায়। বাদ যায়নি হলদিয়াও। হলদিয়া পুর এলাকার বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড প্লাবিত। পঞ্চায়েত এলাকায় প্রচুর চাষের জমির ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে বহু কাঁচা বাড়ি এবং পাকা বাড়ির। ভেসে গিয়েছে মাছের ভেড়ি ও ইটভাটা। এখনও পর্যন্ত বহু মানুষ ত্রাণশিবিরে। প্রশাসনের তরফে সকাল-বিকাল ত্রাণ শিবিরগুলিতে খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে অভিযোগ, হলদিয়া বাসীর এমন দুর্দশার দিনে পথে নামতে দেখা যায়নি স্থানীয় বিধায়ক তাপসী মণ্ডলকে। যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় বিজেপি নেতা-কর্মীদের একাংশ। স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, ‘ভোটের আগে পাশে থাকবেন বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন বর্তমান বিধায়ক। কিন্তু ভোটের পর থেকে কার্যত তাঁর দেখা মিলছে না।’ অনেকে বলছেন, রাজ্য সরকারের দেওয়া কোনও জিনিস না নেওয়ার জন্য এক সময় বিজেপির নেতা-কর্মীরা বলেছিলেন। আশ্বাস দিয়েছিলেন পাশে থাকার। অথচ এখন তাদের দেখা নেই। বরং, রাজ্য সরকারের ত্রাণই এখন তাঁদের ভরসা।
উল্লেখ্য, বিধানসভা নির্বাচনে চৈতন্যপুর পঞ্চায়েতে প্রায় ১৯০০ ভোটে এবং কুকড়াহাটি পঞ্চায়েতে প্রায় ৯০০ ভোটে এগিয়ে ছিল বিজেপি। চৈতন্যপুর পঞ্চায়েতের মনিরামপুরে ত্রাণশিবিরে আছেন বিজেপি কর্মী একাদশী প্রধান। তিনি বলেন, ‘ত্রাণশিবিরে এসে বিধায়ককে ফোন করেছিলাম। বিধায়ক বললেন যা খরচ হচ্ছে হিসাব করে রাখ। পরে টাকা দিয়ে দেওয়া হবে। বিধায়ক ত্রাণ শিবিরে আসেননি। শুধুই আশ্বাস মিলেছে।’ কুকড়াহাটি পঞ্চায়েতের বাসিন্দা সেখ সিরাজ এলাকায় বিজেপি কর্মী বলে পরিচিত। তাঁর আক্ষেপ, ‘কুকড়াহাটির এড়িয়াখালি থেকে ঘুরে গেলেও হরিবল্লভপুরে একবারও আসেননি বিধায়ক।’
এদিকে, শাসক দলেরও অভিযোগ, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় দেখা যাচ্ছেনা বিধায়ককে। মঙ্গলবার থেকে এলাকায় রয়েছেন ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দীপক পন্ডা। সারাদিন বিভিন্ন ত্রাণ শিবিরে ঘুরে মানুষের অভাব-অভিযোগ শুনছেন। তাঁর কথায়, ‘আমরা জনপ্রতিনিধি। মানুষের বিপদে পাশে থাকাটা নৈতিক কর্তব্য বলে মনে করি। বিধায়ক বিপদে মানুষের পাশে থাকা নৈতিক কর্তব্য বলে মনে করেননি। তাই এলাকায় আসেননি। মানুষ দেখতে পাচ্ছেন বিপদে কারা তাঁদের পাশে আছেন।’