এবার আদালতে নারদ মামলার শুনানির প্রক্রিয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে কলকাতা হাই কোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দলকে চিঠি লিখলেন বিচারপতি অরিন্দম সিনহা। নারদ মামলা সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার দাবিতে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চের কাছে লিখিত হলফনামা বা রিট পিটিশন দায়ের করে সিবিআই। চিঠিতে সেই প্রক্রিয়ায় পদ্ধতিগত ত্রুটি তুলে ধরেছেন তিনি। বিচারপতি সিনহা চিঠিতে লেখেন, ‘এ ক্ষেত্রে আদালতের আচরণ কলকাতা হাইকোর্টের ঐতিহ্য অনুসারী নয়। উপহাসের পাত্রে পরিণত হয়েছি আমরা।’
প্রসঙ্গত, আইনের ৪০৭ নম্বর ধারা উল্লেখ করে ইমেল মারফত কলকাতা হাইকোর্টের কাছে নারদ মামলার স্থানান্তরের আবেদন জানায় সিবিআই। চিঠিতে বিচারপতি সিনহা বলেন, ভারতীয় সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২২৮ অনুযায়ী, শুধুমাত্র সিঙ্গল বেঞ্চের কাছেই কোনও দেওয়ানি বা ফৌজদারি মামলার স্থানান্তরের দাবি জানানো যায়। তা সত্ত্বেও ডিভিশন বেঞ্চ সিবিআইয়ের আবেদন গ্রহণ করেছে। শুধু তাই নয়, ওই আবেদনকে লিখিত হলফনামা বা রিট পিটিশন হিসেবেও গ্রহণ করা যায় না, কারণ তাতে আইনের ব্যাখ্যা সংক্রান্ত কোনও বিষয় উল্লেখ থাকে না।
চিঠিতে বিচারপতি সিনহা লেখেন, ‘হতে পারে, বাইরের বিশৃঙ্খলার জন্যই ওই আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু কোনও ডিভিশন বেঞ্চ কি রিট পিটিশনের ভিত্তিতে মামলা গ্রহণ করতে পারে এবং তার শুনানি করতে পারে? সেটাই প্রথম প্রশ্ন।’ এছাড়াও হাইকোর্ট কী ভাবে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতের রায় খারিজ করল, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিচারপতি সিনহা। তাঁর কথায়, ‘মামলা স্থানান্তর করার প্রক্রিয়ার মধ্যে হাইকোর্ট নিজের ক্ষমতা প্রয়োগ করে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কী ভাবে নিম্ন আদালতের রায়ে স্থগিতাদেশ জারি করল?’
এখানেই থামেননি বিচারপতি সিনহা। প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দলকে লেখা চিঠিতে তিনি এ কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, নিয়ম অনুযায়ী, কোনও ডিভিশন বেঞ্চে বিচারপতিদের মধ্যে মতানৈক্য থাকলে তৃতীয় কোনও বিচারপতির মতামত নেওয়া হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে তা হয়নি। সরাসরি পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে পাঠিয়ে দেওয়া হয় নারদ মামলা। বিচারপতি সিন্হার বক্তব্য, যখন একটি ডিভিশন বেঞ্চের রায়ের সঙ্গে অন্য একটি ডিভিশন বেঞ্চের রায়ের মতপার্থক্য লক্ষ করা যায়, তখন তা বৃহত্তর বেঞ্চে পাঠানোর ভাবনাচিন্তা করা যায়।