সোশ্যাল মিডিয়ার রাজ্যে পৃথিবী ‘ফেক নিউজ’ময়। আর এই ফেক নিউজ ছড়ানোর কাজে গেরুয়া শিবির যে সিদ্ধহস্ত, একাধিকবার মিলেছে তার প্রমাণ। এরই মধ্যে টুইটারে টুলকিট নিয়ে ‘ভুয়ো’ টুইট করায় বিজেপির সর্বভাবরতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা-সহ ৫ বিজেপি নেতার টুইটগুলিকে ‘ম্যানিপুলেটেড মিডিয়া’ ট্যাগ দিয়েছে টুইটার। এবার তা নিয়েই বিবাদ শুরু হয়ে গেল কেন্দ্র এবং টুইটার ইন্ডিয়ার মধ্যে। কীসের ভিত্তিতে বিজেপি নেতা সম্বিত পাত্রর টুইটকে ‘কারসাজি’ বা ‘ম্যানিপুলেটেড’ ঘোষণা করল টুইটার? জানতে সোজা টুইটার ইন্ডিয়ার দিল্লীর দুই অফিসে হানা দিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নেতৃত্বাধীন দিল্লী পুলিশ। তাঁদের যুক্তি, বারবার নোটিস দেওয়া সত্ত্বেও টুইটারের তরফে কেউ জবাব না দেওয়ায় তারা বাধ্য হয়েই অফিসে গিয়েছিল জবাব চাইতে।
প্রসঙ্গত, টুলকিট সংক্রান্ত একটি টুইট করে সম্প্রতি কংগ্রেসকে চাপে ফেলতে চেয়েছিল বিজেপি। অভিযোগ, করোনার দ্বিতীয় ধাক্কাকে ব্যবহার করে মোদী সরকারকে বদনাম করার চেষ্টা করছে কংগ্রেস। এবং সেই কাজে তাঁরা ব্যবহার করছে বিতর্কিত টুলকিট। তাদের তরফে দলের মুখ্য মুখপাত্র সম্বিত পাত্র কয়েকদিন আগে একটি টুইট করে দাবি করেন যে কংগ্রেস প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সম্মানহানীর লক্ষ্যে করোনা ভাইরাস নিয়ে রাজনীতি করতে চাইছে। তবে সম্বিতের সেই দাবিকে উড়িয়ে দিয়েছিল কংগ্রেস। তারপরই কার্যত কংগ্রেসের দাবিকে মান্যতা দিয়েই সম্বিত পাত্রের সেই টুইটকে ‘ম্যানিপুলেটেড মিডিয়া’ বা কারসাজি করা মিডিয়ার ট্যাগ দেওয়া হয় টুইটার কর্তৃপক্ষের তরফে।
উল্লেখ্য, সম্বিত এক টুলকিট প্রকাশ করে দাবি করেছিলেন যে কংগ্রেস কোভিডকালে দলীয় কর্মীদের করোনা ভাইরাসের নতুন স্ট্রেনকে ‘মোদী স্ট্রেন’ বলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘এই সেই টুলকিট। যা গোপন অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে অতিমারী নিয়ন্ত্রণে মোদী সরকারকে কাঠগড়ায় তোলার ষড়যন্ত্র করছে কংগ্রেস।’ তিনি রীতিমতো ব্যঙ্গ করে লেখেন, ‘বন্ধুরা দেখুন, কংগ্রেসের টুলকিট কীভাবে অতিমারীর সময়ে অভাবীদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে।’ টুলকিটে নাকি বলা হয়েছে, করোনার ভারতীয় স্ট্রেনকে ‘মোদী স্ট্রেন’ লেখা হোক। সেই সঙ্গে মহাকুম্ভকে ‘সুপার স্প্রেডার’ হিসেবেও বারবার উল্লেখ করতে হবে। কেবল সম্বিত পাত্রই নন, পরে টুলকিট নিয়ে টুইট করেন বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি, বিজেপি নেতা বিএল সন্তোষ।
এরপরই কংগ্রেস পালটা দাবি করে এই ধরনের কোনও টুলকিট তাঁদের তরফে প্রকাশ করা হয়নি। বিজেপি ‘ভুয়ো’ টুলকিট ছড়িয়ে তাঁদের বদনাম করার চেষ্টা করছে। সম্বিত পাত্র-সহ বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগও দায়ের করে হাত শিবির। এরপর টুইটারের তরফেও সম্বিত পাত্রর টুইটকে ‘ম্যানুপুলেটেড মিডিয়া’ হিসেবে দেগে দেওয়া হয়। তারপরই কেন্দ্রের রোষের মুখে পড়ে টুইটার। কেন বিজেপি মুখপাত্রের টুইটকে ‘কারসাজি’ বলা হয়েছিল, তা জানতে চেয়ে টুইটারকে নোটিস পাঠায় দিল্লী পুলিশ। তাদের দাবি, টুইটারের তরফে তাদের পাঠানো নোটিসের জবাব দেওয়া হয়নি। এদিকে, টুইটার যেভাবে বিজেপি নেতার টুইটকে ভুয়ো বলে দেগে দিয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে, এই টুলকিট কাণ্ডে টুইটার কর্তৃপক্ষের কাছে এমন কোনও তথ্য আছে, যা তাদের কাছেও নেই। তাই সেই তথ্য জানতেই টুইটার অফিসে গিয়েছিল তারা।