২০২০ সালের এই মে মাসেই ভয়ঙ্কর করোনা আবহের মধ্যেই ঘূর্ণিঝড় উম্পুনে লণ্ডভণ্ড হয়েছিল কলকাতা-সহ গোটা দক্ষিণবঙ্গ। বছর ঘুরতেই এবার দ্বিগুণ গতিবেগে আছড়ে পড়ছে চলেছে আরেক ঘূর্ণিঝড় যশ। তাই, সম্ভাব্য বিপর্যয় রুখতে প্রশাসনও কোমর বেঁধে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। এই ঘূর্ণিঝড় নিয়ে শনিবারই বৈঠক করেন কলকাতা পুরসভার মুখ্য প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম। প্রশাসক বোর্ডের অন্যান্য সদস্য ছাড়াও পুর কমিশনার বিনোদ কুমার ও অন্যান্য পদাধিকারিরা সেই ভার্চুয়াল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন কেইআইআইপি এবং সিইএসসি’র অধিকারিকরাও। সূত্রের খবর, শহরের বিভিন্ন বোরোর দায়িত্ব প্রশাসক বোর্ডের সদস্যদের ভাগ করে দিয়েছেন ফিরহাদ।
ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, গত বছরের মতো এবারও যেন মানুষের দুরবস্থা না হয়, সেই চেষ্টাই করতে হবে। উম্পুনের কথা মাথায় রেখেই উপড়ে যাওয়া গাছ দ্রুত রাস্তা থেকে সরাতে হবে। আগামী ২৩ মে থেকে ২৮ মে পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে কলকাতা পুরসভার কন্ট্রোল রুম। সিইএসসি জানিয়েছে, প্রতিটি ওয়ার্ডেই টিম রাখবে তারা। কোনও বাতিস্তম্ভ বা ফিডার বক্স থেকে যাতে তার বেরিয়ে না থাকে, তা নিশ্চিত করবে সিইএসসি। ইতিমধ্যেই শহরের বিভিন্ন জায়গায় বিপজ্জনকভাবে ঝুলে থাকা গাছের ডাল বা কেবল তারের সঙ্গে লেগে থাকা ডালপালা ছেঁটে ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। পুরসভার কন্ট্রোল রুমে সিইএসসি’র আধিকারিক থাকবেন। ফ্লাড শেল্টারগুলিকে পরিষ্কার করার কাজ চলছে। পর্যাপ্ত খাবার, ত্রিপল, ওষুধ- সবকিছুর ব্যবস্থাই রাখা হবে।
আগাম সতর্কতা গ্রহণ করেছে বিধাননগর পুরসভাও। ২৪ ঘণ্টার জন্য খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম (৬২৯২২৩৪১২৬)। সূত্রের খবর, সেই পুরসভার অধীনে থাকা গোটা এলাকায় মোট ৯১টি পাম্প থাকছে। এছাড়াও পুরসভার নিজস্ব একটি ড্রেনেজ পাম্প ও ১৩টি নিকাশি পাম্প প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বিধাননগর পুরসভার মুখ্য প্রশাসক কৃষ্ণা চক্রবর্তী জানান, পূর্ত ও সেচ দফতর, হিডকো কর্তৃপক্ষ এবং বিধাননগর পুরসভার সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়াও ১১০ জনের বিশেষ টিম থাকছে। বিদ্যুৎ পরিষেবা সচল রাখার জন্য রাজ্য বিদ্যুৎ দফতরের সঙ্গে কথা বলেছে পুর কর্তৃপক্ষ। জলের সরবরাহ সচল রাখার জন্য মোট ৭২টি ট্যাঙ্ক রাখা হয়েছে।
যশের প্রকোপ থেকে সাধারণ মানুষকে বাঁচাতে হাওড়ার শরৎ সদনেও গতকাল একটি বৈঠক হয়। সেখানে ঠিক হয়েছে, রেল, সিইএসসি, পুলিশের মধ্যে সমন্বয় রেখে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হবে। রেলের সঙ্গে মূলত পুরসভার নিকাশি বিভাগের সমন্বয় বাড়ানো হচ্ছে। কারণ, বহু জায়গায় স্রেফ সমন্বয়ের অভাবেই গত বছর ভুগতে হয়েছে মানুষকে। তাই পদ্মপুকুরে হাওড়া পুরসভার পানীয় জল প্রকল্পে এবার বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। গতবার উম্পুনের সময় জলপ্রকল্পটি বৃষ্টির জলে ভরে গিয়েছিল। হাওড়া পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান অরূপ রায় বলেন, গতবারের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবার আগে থেকে পরিকল্পনা করা হয়েছে। সব বিভাগকেই বাড়তি সতর্ক করা হয়েছে।