তাহলে কি ফের ঘাসফুল শিবিরেই ফিরছেন শোভন চট্টোপাধ্যায়? রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী ও কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তিনি। গতকালই নারদকাণ্ডে সিবিআই যে চার নেতাকে গ্রেফতার করেছেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন শোভনবাবুও। এই চার নেতার গ্রেফতারি কাণ্ডে গতকালই নিজাম প্যালেসে গিয়ে ধর্নায় বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টানা ৬ ঘন্টা সেখানে ধর্না চালিয়ে নবান্নে ফেরত আসেন মুখ্যমন্ত্রী। অনেকেই মনে করছেন, মুখ্যমন্ত্রী মূলত গেছিলেন ফিরহাদ আর শোভনের জন্যই। ফিরহাদ আজ অবধি তৃণমূল না ছাড়লেও শোভনবাবু তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছেন। তবে সেখানে না তিনি কোনওদিন কোনও কাজ করেছেন না কোনও দলীয় কর্মসূচী পালন করেছেন। শেষে আবার বিজেপিও ছেড়েছেন। এরপর গতকালের ঘটনার পরে পরেই এখন তৃণমূলের অন্দরেই গুঞ্জন উঠেছে শোভনের তৃণমূলে ফেরা এখন শুধুই সময়ের অপেক্ষা মাত্র। আজ না হোক কাল তাঁকে ফিরিয়ে নেওয়া হতে পারে।
উল্লেখ্য, শোভন বিজেপিতে গেলেও কোনওদিনই তাঁকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সেভাবে কোমর বেঁধে নামতে দেখা যায়নি। গেরুয়া শিবিরের যাবতীয় কর্মসূচী, মিছিল, মিটিং তিনি এবং তাঁর বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় কোনও না কোনও বাহানা দেখিয়ে এড়িয়ে যেতেন। বিজেপি কার্যত একসময় বাধ্য হয়েছিল শোভনের চাপের কাছে নতিস্বীকার করে বৈশাখীকে দলীয় পদ প্রদান করতে। তবে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি শোভনকে বেহালা থেকে প্রার্থী করলেও তাঁর আসন যেমন বদলে দিয়েছিল ঠিক তেমনি বৈশাখীকেও টিকিট দেয়নি। তার জেরেই বিজেপি ছেড়েছেন দুইজনই। এরপরেই গতকালের গ্রেফতারনামা। লক্ষ্যণীয় ভাবে গতকাল থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূয়সী প্রশংসা শুরু করেছেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকী এটাও জানিয়েছেন, প্রয়োজনে তিনি নাকি মমতার জন্য জীবনও দিয়ে দিতে পারেন। বৈশাখীর এই ভোলবদল দেখে কলকাতা তথা রাজ্যবাসী চিন্তিত নন।
পাশাপাশি, তৃণমূলের অন্দরে এই প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা একদম উড়িয়েও কেউ দিতে পারছেন না। সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রিয় ‘কানন’কে আজও স্নেহ করেন তৃণমূলনেত্রী। তবে বৈশাখীকে ঘিরে তাঁর জীবনযাপন সাফ না পসন্দ মমতার। তাই হয়তো শোভন তৃণমূলে ফিরতে চাইলে তাঁর প্রথম শর্ত হিসাবেই হয়তো বৈশাখীকে ত্যাগ করার বার্তাই দেওয়া হবে কলকাতার প্রাক্তন মেয়রকে। দ্বিতীয় শর্ত থাকবে অবশ্যই স্ত্রী ও পরিবারের কাছে ফেরত যাওয়া। শোভন এই সব শর্ত মানবেন নাকি নিজের ইচ্ছায় জীবনযাপন করবেন, সে সিদ্ধান্ত তাঁকেই নিতে হবে। তবে এখন তাঁর কেরিয়ার ও জীবন দুইই চূড়ান্ত সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে। তৃণমূলের শর্ত না মানলে তাঁর ভবিষ্যত কার্যত চূড়ান্ত অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। বিশেষ করে নারদকাণ্ডে যদি তিনি দোষী সাব্যস্ত হন ও সাজা পান তাহলে তাঁর রাজনৈতিক কেরিয়ার চিরতরেই শেষ হয়ে যাবে। কেবলমাত্র তৃণমূল পাশে থাকলে মাথায় মমতার হাত থাকলে হয়তো আবারও ঘুরে দাঁড়াতে পারেন শোভন। যদি সেটাই হয় তাহলে রাজ্যের রাজনৈতিক ইতিহাসে ওই ঘটনাও কিন্তু মাইলস্টোন হয়ে থেকে যাবে। তবে সব কিছুই এখন নির্ভর করছে শোভনের ওপরেই।