‘প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনা’য় নাম নথিভুক্ত করাতে হয়রানি হতে হয় কৃষকদের। ক্ষতিপূরণ পেতেও বছর গড়িয়ে যায়। বন্যা, খরা-সহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে শষ্যক্ষতির মোকাবিলায় বাংলার কৃষকদের বাঁচাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চালু করতে চলেছেন ‘বাংলার ফসল বিমা প্রকল্প’। এই প্রকল্পের পুরো প্রিমিয়াম বহন করবে রাজ্য সরকার খোদ। এই জন্য ৬০০ কোটি টাকার তহবিল গড়া হবে। ইতিমধ্যেই নবান্নর কর্তারা বিভিন্ন বিমা কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনায় প্রিমিয়ামের দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ৭৫ শতাংশ অর্থ বহন করে রাজ্য সরকার। বাকি টাকা দেয় কেন্দ্র। ২০১৪ সালে এই প্রকল্প চালু হয়েছে। এই জন্য রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই প্রিমিয়াম হিসেবে প্রায় ১২০০ কোটি টাকা মিটিয়েছে। অথচ প্রধানমন্ত্রীর ছবি দিয়ে এই প্রকল্প কৃষকমহলে এমন ভাবে প্রচার করা হচ্ছে যাতে আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে কেন্দ্রই সব টাকা দিচ্ছে। কিন্তু তার পরেও বিমার টাকা নিয়ে রাজ্যকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ।আরও অভিযোগ, কেন্দ্রের বিমা প্রকল্পে নাম নথিভুক্ত করা নিয়ে বাংলার কৃষকরা চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ক্ষতিপূরণ পেতে হয়রানি বাড়ছে। ২০১৭-১৮-তে বাংলার নথিভুক্ত কৃষকরা এখনও ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি। ২০১৬-১৭র নথিভুক্ত কৃষকের একটা অংশেরও একই দশা।
কেন্দ্রের এই আচরণে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, প্রিমিয়ামের ৭৫ শতাংশর বেশি টাকা রাজ্য সরকার দেওয়ার পরেও কেন বাংলার কৃষক ক্ষতিপূরণের টাকা পাবেন না? প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনার সুযোগ পেতে বাংলার কৃষকদের কেন্দ্রের নির্দিষ্ট পোর্টালে আবেদন জানাতে হয়। বেশিরভাগ সময়ই সেই পোর্টাল অচল থাকে। নাম নথিভুক্তির সময়সীমা ছিল ৩১ জুলাই। কিন্তু ২৭ জুলাই পর্যন্ত পোর্টাল অচল ছিল। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের একটা বড় অংশ আবেদন জানাতেই পারেননি। এই জন্য দিনক্ষণ বাড়ানোর আর্জিও জানিয়েছিল রাজ্য। তার পরেও তা বাড়ানো হয়নি। এমন সব বিষয়ে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী বাংলার কৃষকদের ফসল রক্ষায় বিমা আনার কথা ভেবেছেন।
মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি বিষয়ক উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার বলেন, ‘প্রিমিয়ামের ৭৫ শতাংশর বেশি টাকা রাজ্য দিলেও কেন্দ্রীয় এই বিমা প্রকল্প থেকে বাংলার কৃষকরা উপযুক্ত সাহায্য পাচ্ছেন না। তাই মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের অর্থনৈতিক অনটনের মধ্যেও কৃষকদের স্বার্থের কথা মাথায় রেখে বাংলার নিজস্ব ফসল বিমা চালু করার নির্দেশ দিয়েছেন। যার সমস্ত প্রিমিয়াম রাজ্য সরকার বহন করবে। প্রতিবছর প্রকৃতির খামখেয়ালিপনায় কৃষকের ক্ষতি হচ্ছেই। এ জন্য ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে’।