দেশে করোনার প্রথম হটস্পট হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল, দিল্লীর নিজামুদ্দিন মারকাজে তবলিঘি জামাতের বিপুল জমায়েতকে। দেশ-বিদেশের কয়েক হাজার ধর্মপ্রাণ সুন্নি মুসলিম সমবেত হয়েছিলেন সেখানে। যাঁদের মধ্যে অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হন। আর তারপরেই দেশজুড়ে ব্যাপক শোরগোল পড়ে গিয়েছিল দেশজুড়ে। তবে বছর ঘুরতেই বদলে গিয়েছে সেই ছবি। দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে অন্ধ্রপ্রদেশের তিরুপতিতে করোনায় মৃতদেহ সৎকারের দায়িত্ব নিজেদের ঘাড়ে তুলে নিয়েছেন সেই তবলিঘি জামাতের সদস্যরা। তিরুপতি ইউনাইটেড মুসলিম অ্যাসোসিয়েশনের ছাতার তলায় গড়ে তোলা হয়েছে কোভিড নাইন্টিন জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি। সদস্যরা নিরলসভাবে প্রতিদিন ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে করোনায় মৃতদের শেষকৃত্য সম্পন্ন করছেন।
সংগঠনের অন্যতম সদস্য জেএমডি গউস বলেছেন, ‘গত বছর সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার জন্য আমাদের দোষারোপ করা হয়েছিল। তবে এবার আমরা মানুষের যথেষ্ট প্রশংসা পাচ্ছি।’ প্রসঙ্গত, বর্তমান কোভিড পরিস্থিতিতে দেশের প্রায় সর্বত্রই হাসপাতাল থেকে শ্মশান বা গোরস্থানে ঠাঁই নেই অবস্থা। প্রায় সর্বত্রই চলছে অক্সিজেনের জন্য হাহাকার। অনেক ক্ষেত্রেই পাওয়া যাচ্ছে না প্রয়োজনীয় ওষুধ, অ্যাম্বুল্যান্স। এমনকী পাওয়া যাচ্ছে না টিকা। এই পরিস্থিতিতে এগিয়ে এসেছেন তবলিঘি জামাতের সদস্যরা। প্রতিদিন প্রায় ৬০ জন স্বেচ্ছাসেবক মানুষের শেষকৃত্য সম্পন্ন করছেন। মৃতরা যে ধর্মাবলম্বী সেই মতো নিয়ম-রীতি মেনেই হচ্ছে সৎকার। গউস বলেছেন, ‘এক মাস ধরে প্রতিদিন প্রায় ১৫টি করে মৃতদেহ সৎকার করছেন আমাদের সদস্যরা। সৎকার করতে অনেকে সমস্যায় পড়ছেন। অনেক ক্ষেত্রে সৎকার করার মতো কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। সে সব ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে সদস্যরা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ৬০ জন সদস্যকে তিনটি দলে ভাগ করা হয়েছে। প্রত্যেকটি দল দিনে চার থেকে পাঁচটি মৃতদেহ সৎকার করছে। মৃত হিন্দু হলে আমরা দেহ সাদা কাপড়ে ঢেকে ফুলের মালা দিয়ে সাজাচ্ছি। খ্রিস্টান হলে দেহ কফিনবন্দি করে চার্চের ফাদারকে ডাকছি প্রার্থনা আয়োজনের জন্য। মুসলিম হলে জানাজে কি নমাজ আয়োজন করছি।’ সতর্কতা হিসাবে প্রত্যেক সদস্যের জন্য পিপিই কিটের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। পুরসভা, পুলিশ এবং প্রশাসনের অন্যান্য বিভাগের সম্পূর্ণ সহযোগিতা এবং সমর্থন পাচ্ছেন তাঁরা। উল্লেখ্য, করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময় ১৩৪ জনের এবং দ্বিতীয় ঢেউয়ে এখনও পর্যন্ত ৪০২ জনের, অর্থাৎ মোট ৫৩৬ জনের সৎকার সম্পন্ন করেছে তিরুপতির জামাত সদস্যরা। স্বেচ্ছাসেবকদের অধিকাংশ অটোচালক বা রেস্তোরাঁ কর্মী বা শ্রমিক। লকডাউনের জেরে সকলেরই রোজগার বন্ধ। ছ’জন যুবক রয়েছেন, যাঁরা মুসলিমও নন।