২০১৯-এর মে মাস। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে নাস্তানাবুদ গোটা দেশ। তারই মধ্যে ঢাকঢোল পিটিয়ে ঘোষণা হল, ভেন্টিলেটর কিনতে ২ হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে পিএম কেয়ার্স ফান্ড। মোট ৫০ হাজার ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ ভেন্টিলেটর কেনা হবে ওই টাকায়। পাবে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল। তারপর কেটে গিয়েছে প্রায় এক বছর। কিন্তু এখনও ৬ হাজার ৩০০ ভেন্টিলেটর সরবরাহ করা হয়নি। কারণ? বকেয়া অর্থ পায়নি উৎপাদনকারী সংস্থা। বৃহস্পতিবার একটি সর্বভারতীয় অনলাইন সংবাদমাধ্যমের তদন্তমূলক রিপোর্টে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক সহ সব পক্ষের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
জানা গিয়েছে, পিএম কেয়ার্স ফান্ড টাকা বরাদ্দ করেছিল স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রককে। মন্ত্রক এইচএলএল লাইফকেয়ার লিমিটেডকে ৫০ হাজার ভেন্টিলেটর কেনার দায়িত্ব দেয়। তারাই ওই ভেন্টিলেটরের জন্য একাধিক সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করে। এর মধ্যে একটি সরকারি সংস্থা, নাম অন্ধ্রপ্রদেশ মেডটেক জোন লিমিটেড। তারা আবার ট্রিভিটন হেলথ কেয়ার নামে চেন্নাইয়ের একটি সংস্থাকে লো ফ্লো অক্সিজেন ভেন্টিলেটর সরবরাহের বরাত দেয়। ইউনিট পিছু ১ লক্ষ ৪৮ হাজার ৫৫০ টাকা হিসেবে প্রথমে ২ হাজার ও পরে ৫ হাজার এলএফও তৈরি করতে বলা হয়। ট্রিভিয়ন জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত ৬৫০টি ভেন্টিলেটর সরবরাহ করেছে তারা। প্রথম অর্ডারের ১ হাজার ৬০০ ইউনিট চলতি বছরের এপ্রিল-মে মাসে সরবরাহের কথা ছিল। কিন্তু, চুক্তি মতো জন্য অগ্রিম তারা পায়নি। ফলে উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ৩০ এপ্রিল দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা পার করেছিল ৪ লক্ষ। তারপর থেকে সংক্রমণের হার সামান্য কমেছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় আবারও সেই রেকর্ড ছাপিয়ে গেল। একদিনে পশ্চিমবঙ্গ সহ গোটা দেশে ৪ লক্ষ ১২ হাজার ২৬২ জন আক্রান্ত হয়েছেন বলে বৃহস্পতিবার সকালে জানিয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রক। মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ৯৮০ জনের।
উল্লেখ্য, দেশে দৈনিক আক্রান্তদের ৭২.১৯ শতাংশই পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লী সহ ১০টি রাজ্যে বলে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে ক্রমশ সংক্রমণ বাড়ছে। তাই পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা, অসম, বিহার এবং ঝাড়খণ্ডের সঙ্গে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ এবং নীতি আয়োগের সদস্য (স্বাস্থ্য) ডাঃ বিনোদ কুমার পল। এদিকে, করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে বিদেশ থেকে যেসব সাহায্য আসছে, তা দ্রুত রাজ্যগুলিকে বিতরণে জোর দিয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রক। ৩ হাজার অক্সিজেন কনসেনট্রটর, ভেন্টিলেটর, বাই প্যাপ, সি প্যাপ, রেমডেসিভির, এমনকী পিপিই কিটও এসেছে। কোন রাজ্যের কী প্রয়োজন, কীভাবে তা পৌঁছবে, ইত্যাদি ইস্যুতে আলোচনা করতে বৃহস্পতিবার বিশেষ বৈঠকে বসেছিল সরকারের হাই পাওয়ার্ড কমিটি।