রিজার্ভ ব্যাঙ্কের স্বাধীনতা নিয়ে মোদী সরকারের সঙ্গে বিতর্কে বর্তমান গভর্নর উর্জিত প্যাটেলের পাশে দাঁড়ালেন প্রাক্তণ আরবিআই গভর্নর রঘুরাম রাজন। সাফ বলে দিলেন, ‘না বলার অধিকার রয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের’। পাশাপাশি জানিয়ে দিলেন, ‘রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর বা ডেপুটি গভর্নরদের কোনও রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত স্বার্থ নেই। তাঁরা দেশের আর্থিক স্থায়িত্ব বজায় রাখার পক্ষে মত দিচ্ছেন। তাই সরকারের উচিত, তাঁদের কথা শোনা’।
উত্তরসূরি উর্জিতের সঙ্গে সরকারের বিবাদ বিতর্কে এই প্রথম মুখ খুললেন রাজন। নিজের সময়ের উদাহরণ টেনে তিনি জানান, তাঁর টেবিলেও সরকারের অনেক চিঠি পড়ে থাকত। একটা বিষয়ে আপত্তি জানালে, সরকার বলত, ঠিক আছে। দু’দিন পরে ফের চিঠি লিখে নতুন কোনও বিষয় তোলা হত। কিন্তু রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ‘না’ বলার অধিকার ছিল।
মোদী সরকার রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আইনের ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে গভর্নরের উপর চাপ তৈরি করায়, ডেপুটি গভর্নর বিরল আচার্য হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের স্বাধীনতাকে মর্যাদা না দিলে, আর্থিক বাজারের রোষ টের পাওয়া যাবে’। বিরলের সেই মতকে সমর্থন করে রাজন বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ককে মাড়িয়ে চলে যাওয়া কোনও অর্থনীতির পক্ষেই ভাল নয়।’ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ও সরকারের সম্পর্ক নিয়ে তিনি বলেন, ‘রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গাড়ির সিটবেল্ট, সরকার গাড়ির চালক। সরকার ঠিক করতে পারে, সিটবেল্ট পড়বে কি না। কিন্তু সিটবেল্টের মাহাত্ম্য হল, তা অর্থনীতিকে ভেঙে পড়া থেকে রক্ষা করে’।
গভর্নর থাকাকালীন রাজনকেও আরএসএস-এর তোপের মুখে পড়তে হয়। সেই পর্বে রাজন নিজেই বিদায় নেন। এখন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পরিচালন বোর্ডে আরএসএস-ঘনিষ্ঠ এস গুরুমূর্তির মতো ব্যক্তিদের বসিয়েছে মোদী সরকার। গুরুমূর্তিরা নানা ভাবে গভর্নর, ডেপুটি গভর্নরদের উপর ছড়ি ঘোরানোর চেষ্টা করছেন বলে বারবার অভিযোগ উঠেছে। রাজনের কথায়, ‘বোর্ডের সদস্যদের কাজ পরামর্শ দেওয়া। রোজকার আর্থিক সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করা নয়। কিন্তু সম্প্রতি দেখছি, বোর্ডের ভূমিকা গণ্ডি পেরিয়ে যাচ্ছে। বোর্ডের মধ্যে আলোচনা নিয়েও অনেক বিতর্ক হচ্ছে।’