হল না বাজিমাত। দলবদলের খেলা বিজেপি কাছে কার্যত বুমেরাং হয়ে দাঁড়াল। বিধানসভা নির্বাচনে আশির গণ্ডি না পেরনো গেরুয়া শিবিরে এই চর্চাই ঘোরাফেরা করেছে সারাদিন। দলীয় সূত্রের দাবি, ২৯৪টি বিধানসভা আসনে ১০৭ জন দলবদলুকে প্রার্থী করেছিল বিজেপি। তার মধ্যে ৭৬ জনই পরাজিত হয়েছেন। শতাংশের বিচারে দলবদলুদের ৭১ শতাংশই পরাজিত হয়েছেন। যার মধ্যে জোড়াফুল শিবির থেকে আসা নেতা-নেত্রীর সংখ্যাই বেশি। দলের অন্দরে এ নিয়ে আগেও ক্ষোভ ছিল। ভোটের ফল প্রকাশের পর তা আরও মাথাচাড়া দিয়েছে। শুধু তাই নয়, রাজ্য নেতৃত্বের উপর ভরসা না করে দিল্লীর নেতারা যেভাবে পুরো নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছিলেন, তা নিয়েও অসন্তোষ তৈরি হয়েছে গেরুয়া শিবিরে। রাজ্যের এক শীর্ষ নেতার দাবি, দিল্লীর ভোটার এমন একাধিক ব্যক্তির নাম তড়িঘড়ি এরাজ্যের ভোটার তালিকায় ঢোকানো হয়েছিল। তারপর তাঁদের অনেককেই টিকিট দেওয়া হয়েছিল। সাধারণ বিজেপি কর্মীদের কাছে তাঁদের কোনও গ্রহণযোগ্যতা ছিল না বলে ওই নেতা জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, বিধানসভা ভোটের ঠিক আগে রাজ্য বিজেপির সাফল্যের অন্যতম কারিগর সুব্রত চট্টোপাধ্যায়কে অপসারণের ঘটনাও উঠে আসছে হারের ময়নাতদন্তে। ওই প্রবীণ নেতা দাবি, সুব্রতবাবুর সঙ্গে বুথস্তরের কর্মীদের পরিচয় ছিল। তাঁর পরিবর্তে যাঁকে সংগঠন মন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়, তাঁর সেই দক্ষতা ছিল না। সব মিলিয়ে হারের কারণ হিসেবে নিজেদের ভুলের মাশুল গুনছেন বিজেপি নেতা-কর্মীদের। জানা গিয়েছে, রাজ্য বিজেপির একটি বড় অংশ দলবদলুদের নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল। কিন্তু তা কার্যত কানেই তোলেননি অমিত শাহরা। দিল্লী থেকে একের পর এক নির্দেশ কার্যত চাপিয়ে দেওয়া হয় বঙ্গ বিজেপির ঘাড়ে। দলবদলুদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল ছিল না। তাই সাধারণ মানুষের মধ্যে তাঁদের গ্রহণযোগ্যতা তলানিতে ছিল বলে মনে করে রাজ্য বিজেপির একাংশ। যার এই ধরনের অধিকাংশ প্রার্থীকেই প্রত্যাখ্যান করেছে মানুষ। স্বপন দাশগুপ্ত, অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো দিল্লির নেতাদের প্রার্থী করার বিষয়টিও ভুল সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন তাঁরা। দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে সংগঠন সম্পাদকদের এনে বাংলার নেতাদের মাথায় বসিয়ে দেওয়ার বিষয়টি এখন কুরে কুরে খাচ্ছে বঙ্গ নেতাদের। অমিত শাহর এই একতরফা সিদ্ধান্তই ডুবিয়ে দিয়েছে দলকে, এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
প্রশ্ন উঠছে, তবে কি এই পরাজয়ের পিছনে সবটাই অমিত শাহর ব্যর্থতা? জবাবে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, “আমরা গত বিধানসভা ভোটে তিনজন জিতেছিলাম। সেখান থেকে আমরা এখন বিধায়ক সংখ্যা ২৬ গুণ বাড়িয়েছি। ফলে একে ব্যর্থতা নয়, সাফল্য হিসেবেই দেখছি আমরা। তবে, এটা ঠিক যে, আমরা পশ্চিমবঙ্গে সরকার গঠনের লক্ষ্যে লড়েছিলাম। কিন্তু সেই জনাদেশ আমরা পাইনি। আমরা বিরোধী হিসেবে নিজেদের দায়িত্ব পালন করব।” এদিকে, প্রার্থীদের একটি বড় অংশ ভিন্ন দল থেকে আসায় ভোটের রণকৌশলে বেশ কিছু মতান্তর ছিল বলে মনে করছে দলের একাংশ। তাদের মতে, আরএসএসের নিয়ন্ত্রণ এবারের ভোটে কিছুটা আলগা হয়ে গিয়েছিল। ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যেই দলবদলুদের বিষয়ে সঙ্ঘ পরিবার আদর্শের সঙ্গে কিছুটা আপস করেছিল। কিন্তু দিনের শেষে দেখা গেল, তা কাজে আসেনি। তাঁদের কথায়, লোকসভা ভোটের মতো পুরনো কর্মীদের উপর আস্থা রাখলেই এবার আরও ভালো ফল হত। অর্থাৎ আরও বেশি সংখ্যায় আদি কর্মী বা আরএসএস মনোনীত ব্যক্তিদের টিকিট দিলে ফল আরও ভালো হতে পারত।