এক দশক আগেও রাজ্যে ক্ষমতায় ছিল তারা। দু’দিন আগেও কয়েক ডজন বিধায়ক ছিল তাদের। কিন্তু একুশের মহাযুদ্ধের ফল ঘোষণা হতেই দেখা গেল, বাংলা থেকে কার্যত একেবারেই ভ্যানিশ রাজ্যে একটানা ৩৪ বছর সরকার চালানো সিপিএম। বিধানসভায় যেতে পারলেন না একজনও সিপিএম তথা বাম প্রার্থী। রক্তক্ষরণ চলছিল। উনিশের লোকসভার পর রক্তশূন্যতার পর্যায়ে পৌঁছেছিল। আর একুশের ভোটে সিপিএম যেন কঙ্কাল! তবে তারা যে একেবারেই নেই, তা নয়। সিপিএম আছে ফেসবুকের ওয়ালে, সিপিএম আছে বিচ্ছিন্ন টুইটারে, সিপিএম আছে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে। শুধু বিধানসভায় নেই। আর তার ফলে রবিবার বিকেল থেকেই দলের অনেক কর্মী বলতে শুরু করেছেন, ‘আমাদের পার্টিটাকে এসইউসি বানিয়ে দিলেন নেতারা।’
প্রসঙ্গত, এবারের ভোটে সিপিএম আলোচনায় থেকেছে ব্যাপক ভাবে। তা মূলত সোশ্যাল মিডিয়ার প্রচার নিয়ে। ব্রিগেডের আগে যার শুভ মহরৎ হয়েছিল। টুম্পা সোনার প্যারোডি হু হু করে ভাইরাল হয়েছিল ইনবক্সে ইনবক্সে। তারপর হরতেক রকম পোস্টারের সেট, ডজন খানেক প্যারোডি গান বেঁধে সিপিএম হইহই ফেলে দিয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। কিন্তু ইভিএম খুলতেই দেখা গেল, বামেদের ভোট ৭ শতাংশ থেকে আরও তলানিতে ঠেকেছে। অনেকে ইতিমধ্যেই বলতে শুরু করেছেন, ডিজিটাল রাংতায় মোড়া ছিল ভুল কৌশল। উপরটা চিকনচাকন হলেও ভিতরে আসলে ঘুঁটে ছিল। ইভিএম খুলতেই তা বেরিয়ে পড়েছে।
সিপিএমের অধিকাংশ জেলার নেতাকর্মীদের এখন আক্রমণের মুখে মহম্মদ সেলিম। তাঁর বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় বইছে। তাঁদের মতে, সেলিমের নেতৃত্বেই মুসলমান ধর্মগুরুকে চিত্রনাট্য মুখস্থ করিয়ে ধর্মনিরপেক্ষ সাজানো হয়েছিল। তৃণমূলের দখলে থাকা সংখ্যালঘু ভোট ভাঙার যে কৌশল আলিমুদ্দিন নিয়েছিল তা কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে। তাতে যেটা হয়েছে সেটা হল, বাম এবং কংগ্রেসের শক্তি থাকা মালদা, মুর্শিদাবাদেও সংখ্যালঘু ভোট তৃণমূলের দিকে পুঞ্জীভূত হয়েছে। গতকাল ভোটের ফল প্রকাশের পরে খোদ সিপিএম নেতা তথা উত্তর দমদমের বিদায়ী বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্য সেলিমের নাম না করে বলেন, এক পলিটব্যুরোর সদস্য আইএসএফ-কে চাপিয়ে দিয়েছিল ঘাড়ে। তাঁর দায় নেতৃত্বকেই নিতে হবে।
প্রসঙ্গত, আব্বাসউদ্দিন সিদ্দিকিকে নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর বিস্তর আপত্তি ছিল। কিন্তু কংগ্রেসের অনেকের মতে, সিপিএম কার্যত ভাইজানকে জোটে রাখতে চাপ দিয়েছিল। আব্বাসও অধীর-বিরোধী অবস্থান নিয়ে চলেছেন বরাবর। ব্রিগেডের মঞ্চেও সেই দূরত্ব চোখে পড়েছিল। মোর্চার নেতাদের মধ্যে এই অনৈক্যর ছবি সাধারণ মানুষের চোখ এড়ায়নি। তাই সমগ্র বিজেপি বিরোধী ভোট এককাট্টা হয়েছে তৃণমূলের দিকে। যদিও এবারের ভোটে অনেক তরুণ মুখকে প্রার্থী করেছিল সিপিএম। তবে পর্যবেক্ষকদের মতে, কেরালাকে টুকলি করতে গেছিল বঙ্গ সিপিএম। কেরালা সিপিএম তরুণদের নেতৃত্বে তুলে নিয়ে আসার বিষয়ে ধারাবাহিক অনুশীলন চালায়। কিন্তু বাংলায় ভোটের আগে সিপিএম তরুণদের শোকেস সাজিয়েছিল। তাই তাঁদের ভোট দেওয়ার কথা মাথাতেও আনেননি রাজ্যবাসী।