বাংলায় নির্বাচনী প্রচারে কোনোরকম ত্রুটিই রাখেনি বিজেপি। কোটি কোটি টাকা খরচ করে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টকে দিয়ে নেতাদের মাথায় পুষ্পবৃষ্টি , কৃত্রিম উচ্ছ্বাস তৈরি। কিন্তু তাতেও বাজিমাত হল না। জনসভায় ভিড় জমিয়ে ‘দিদি অ দিদি’ বলে ব্যঙ্গ করেও লাভ হল না। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী হয়তো ভেবেছিলেন, গুজরাত, উত্তরপ্রদেশের স্টাইলেই বাংলার দখল নেবেন। কিন্তু, বাংলা অন্য ভাষায় কথা বলে। বাঙালি শুধু আত্মাভিমানী নয়, প্রতিবাদীও। আঘাত করলে প্রত্যাঘাত করে। নীরবে। বুলেটের জবাব ব্যালটেই দিল তারা।
‘দিদি’ শব্দটিকে নরেন্দ্র মোদী উপহাসের জায়গায় নিয়ে চলে গেছেন। তিনি শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই ছোট করেননি, বাংলার নারী জাতিকে অপমান করেছেন। বর্ষীয়ান মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি প্রধানমন্ত্রীর এমন অশোভন কটাক্ষ বাংলার মা, বোনেরা ভালো চোখে দেখেননি। কমিশনে নালিশ জানানোর পরেও প্রধানমন্ত্রী বিরত হননি। উল্টে হাততালির লোভে প্রতিটি সভায় বারবার ‘দিদি অ দিদি’ বলে মমতাকে বিদ্রূপ করেছেন।
পাশাপাশি মোদীর যোগ্য উত্তরসূরি হওয়ার চেষ্টা চালিয়েছেন দিলীপ ঘোষ। তিনিও দিনের পর দিন মহিলা মুখ্যমন্ত্রীকে কুৎসিত ভাষায় আক্রমণ করেছেন। জখম মুখ্যমন্ত্রীকে বারমুডা পরার পরামর্শ দিয়ে অশিক্ষিত ভক্তকুলের হাততালি পেয়েছেন। মমতাকে কুরুচিকর আক্রমণ করে সিপিএম নেতা অনিল বসুও হাততালি কুড়িয়েছিলেন। কিন্তু, মানুষ তাঁকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করেছিল। দিলীপবাবু তা থেকে শিক্ষা নেননি। তাই বাংলার নারীরা তাঁদের সমুচিত শিক্ষা দিয়েছেন।
বাংলাজুড়ে হাওয়া অনুভব করেই বোঝা যাচ্ছিল, মহিলা ভোটের সিংহভাগ যাচ্ছে মমতার দিকে। শুধু তৃণমূল নেত্রীকে অপমানের কারণেই নয়, বাংলার নারীদের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর একের পর এক প্রকল্প তাঁকে জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে দিয়েছে। সবুজসাথী, কন্যাশ্রী, রূপশ্রীর প্রকল্প চালু করে তিনি বাংলার মেয়েদের কাছে ‘দিদি’, প্রকৃত আপনজন হয়ে উঠেছেন। তাই মোদী বাংলায় এসে যত কটাক্ষ করেছেন, বাংলার মা, বোনেরা তত বেশি করে বিজেপির বিরুদ্ধে একজোট হয়েছেন।
তৃণমূল নেত্রীকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য যখন বাংলার মা, বোনেদের অসম্মান করেছেন বিজেপি নেতারা, তখন তৃণমূলনেত্রী তাঁদের সম্মানের ডালি উপহার দিয়েছেন। মমতা জানেন, সংসারে অবহেলিত নারীদের মর্যাদা দিতে হবে। তবেই সমাজ এগবে। তাই স্বাস্থ্যসাথী কার্ড পরিবারের মহিলাদের নামে। এতবড় সম্মান মমতার আগে আর কেউ তাঁদের দেননি। মাসে ৫০০ টাকা হাত খরচ দেওয়ার ঘোষণায় প্রমাণ হয়েছে, অভাবী পরিবারে মায়ের ব্যথা তিনি উপলব্ধি করেছেন। তাই বাংলার নারীরা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ। তৃণমূলনেত্রীর প্রতিটি জনসভায় মহিলাদের বিপুল উপস্থিতিই ছিল তার জ্বলন্ত খতিয়ান।