গতকাল রাত থেকেই শারীরিক অবস্থার ক্রমশ অবনতি হচ্ছিল। এমনকি একবার মৃত্যু সংক্রান্ত গুজবও ছড়িয়েছিল। তবে বিশ্বস্ত মহল সূত্রে পরে খবর পাওয়া যায়, তিনি এখনও বেঁচে আছেন। জরুরি ভিত্তিতে তাঁর প্লাজমা চাই। কিন্তু শেষরক্ষা হলো না। অবশেষে আজ সকালে মৃত্যু হল সাহিত্যিক অনীশ দেব।
জানা গিয়েছে, কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। ভর্তি ছিলেন একটি বেসরকারি হাসপাতালে। মঙ্গলবার তাঁকে রক্ত দেওয়া হয়। তিনি ভেন্টিলেশনে ছিলেন। আজ, বুধবার সকাল ৭টা ১০-এ তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। অনীশ দেবের প্রয়াণে শোকস্তব্ধ বাংলা সাহিত্য মহল। তাঁর মৃত্যুতে শেষ হয়ে গেল একটা অধ্যায়। পাঠকগণ হারাল তাঁদের প্রিয় লেখককে।
অনীশবাবুর পরিবারের তরফে জানা গিয়েছে, বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন এই প্রবীণ লেখক। কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হওয়ায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই তাঁর করোনা পরীক্ষা করা হলে রিপোর্ট পজিটিভ আসে। ক্রমশ শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে অনীশবাবুকে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়। অবশেষে বুধবার সকালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে সাহিত্যিক কন্যা মোনালিসা বলেন, “বাবা নেই। খবর পেতেই মা খুব ভেঙে পড়েছেন। এখন আমাকেই স্ট্রং থাকতে হবে। আর তো উপায় নেই। বাবাই শিখিয়েছিলেন লড়াই জারি রাখতে।” লেখক কন্যা আরও বলেন, “বাবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছিল। পরে কোভিডও ধরা পড়ে। শারীরিক অবস্থা খারাপ হচ্ছিল। প্লাজমা ডোনার দরকার ছিল। সবই ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না।”
সাহিত্যিক অনীশ দেবের জন্ম ১৯৫১ সালে কলকাতায়। লেখালিখি শুরু করেন ১৯৬৮ সালে। তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ও গল্পগ্রন্থ– ঘাসের শীষ নেই, সাপের চোখ, তীরবিদ্ধ, জীবন যখন ফুরিয়ে যায় ইত্যাদি। ছোটদের জন্য সম্পাদনা করেছেন সেরা কল্পবিজ্ঞান, সেরা কিশোর কল্পবিজ্ঞান ইত্যাদি গ্রন্থ। তাঁর জনপ্রিয় বিজ্ঞান গ্রন্থ- বিজ্ঞানের হরেকরকম, হাতে কলমে কম্পিউটার, বিজ্ঞানের দশদিগন্ত ইত্যাদি।
২০১৯ সালে কিশোর সাহিত্যে জীবনব্যাপী অবদানের জন্য রাজ্য সরকারের বিদ্যাসাগর পুরস্কারে সম্মানিত হন অনীশ দেব। এর আগে প্রাচীন কলাকেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৮) ও ডঃ জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ পুরস্কারে (১৯৯৯) সম্মানিত হয়েছেন তিনি। এহেন জনপ্রিয় লেখকের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে বাংলা সাহিত্যিক এবং পাঠক মহলে।