ভোট প্রচারে গিয়ে নন্দীগ্রামের বিরুলিয়া বাজারে আক্রান্ত হয়েছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে সেই এসএসকেএম হাসপাতালে শুয়েই ভিডিও বার্তায় মমতা জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, প্রয়োজন হলে হুইল চেয়ারে করেই প্রচারে বেরবেন তিনি। আর সেইমতোই এখন জখম পায়ে প্লাস্টার বেঁধেই ঘুরতে হচ্ছে তাঁকে। ভোটপ্রচারে হুইল চেয়ারে চেপেই রাজ্যের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে সভা করে বেড়াচ্ছেন তিনি। সবমিলিয়ে এ এক অসম লড়াই ছিল, কিন্তু তিনিও নাছোড়বান্দা। আর তাই অসম্ভবকেও সম্ভব করেছেন। তবে এবার সেই লড়াই সাঙ্গ হল তাঁর। আর হুইলচেয়ারে বসেই এবারের মতো শেষ ভার্চুয়াল প্রচার সারলেন মমতা।
প্রসঙ্গত, এদিন উত্তর কলকাতা-শ্যামপুকুর কেন্দ্রের অন্তর্গত মিনার্ভা থিয়েটারে তৃণমূল নেত্রী বক্তব্য শুরু করার কিছুক্ষণ আগেই নির্বাচন কমিশনকে ভর্ৎসনা করেছে মাদ্রাজ হাইকোর্ট। এই কোভিড পরিস্থিতির জন্য মাদ্রাজ হাইকোর্টের তরফ থেকে কমিশনকেই দায়ী করে বলা হয়েছে যা হয়েছে তা খুনের সামিল। মমতা তাই বক্তব্যের শুরুতেই সেই রায় সামনে আনেন। আগাগোড়া সুর চড়ান কমিশনের পরিকল্পনার অভাব ও পক্ষপাত নিয়ে। মমতা এদিন বলেন, মাদ্রাস হাইকোর্টের রায়কে স্বাগত জানাচ্ছি। হাইকোর্ট স্পষ্ট বলেছে, নির্বাচন কমিশন দায় এড়াতে পারে না। নির্বাচন কমিশনকে তৃতীয় দফা থেকে বলছি সংযুক্তিকরণ চাই। কমিশন শোনেনি, কারণ ভোট হয়েছে বিজেপির মণ্ডল ধরে।
মমতার সাফ যুক্তি, কেরালায় এক দফায় ভোট, তামিলনাড়ুতে এক দফায় ভোট, আসামে দুই দফায় ভোট, তাহলে বাংলায় আটটা দফা কেন? দ্ব্যর্থহীন ভাষায় তিনি বলেন, কোভিড বাড়িয়েছে কমিশন ও নরেন্দ্র মোদী। পাশাপাশি তাঁর হুঙ্কার, ‘ভোটের পর সুপ্রিম কোর্ট যাব।’ ভিনরাজ্য থেকে আরটিপিসিআর টেস্ট ছাড়াই বাহিনী নিয়ে আসা এবং জেলায় জেলায় ভিড় বাড়ানোর মতো একের পর এক ইস্যু নিয়েও এদিন মুখ খোলেন মমতা। বলেন, তিনমাস ধরে কলকাতায় বাহিনী আছে। বিভিন্ন জেলায় গিয়ে কোভিড ছড়াচ্ছে। স্কুল-কলেজ-স্টেডিয়াম দখল করে রেখেছে। আরটিপিসিআর টেস্ট হচ্ছে না।
এরই সঙ্গে রাজ্য পুলিশের অপব্যবহারের অভিযোগও তোলেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘সায়নী বলছে, পোলিং এজেন্টদের বাড়ি গিয়ে পুলিশ বলছে ভোট দিতে যাবে না। সব ক’টা সিটে হারবে, দালালি করেও। আমি কাঠগড়ায় দাঁড় করাব কমিশনকে। মোদী এবং কমিশন দুই পক্ষই দায়ী।’ ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘মানুষ বিপদে, গণচিতা জ্বলছে, নরেন্দ্র মোদী আত্মনির্ভরতার কথা বলছে। অক্সিজেন নেই, মেডিসিন নেই, ভ্যাকসিন নেই, কোথায় গেল, মোদীকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছি, কমিশনকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছি।’ তাঁর সাফ কথা, ‘বাংলাই একমাত্র যারা প্রতিবাদ করতে পারে। ওরা বাংলার মেরুদণ্ড ভাঙতে চায়। আমরা ভাঙতে দেবো না। এটা বাংলাকে রক্ষা করার লড়াই।’