অবনী বাড়ি নেই। আছে তাঁর দুই শাবক। এই মুহূর্তে যারা একদমই অনাথ।
অবনী নামের এক বাঘিনি হত্যার প্রতিবাদে ইতিমধ্যেই সারা দেশ আলোড়িত। নৃশংসতার প্রতিবাদে উথালপাথাল সোশ্যাল মিডিয়া। উঠে আসছে নানা অভিযোগ আর প্রশ্ন। মৃত বাঘিনির দুটো ১০ মাসের শাবক রয়েছে। তাদের কী হবে? উঠছে প্রশ্ন।
এই অবস্থায় একপ্রকার বাধ্য হয়েই মুখ খুললেন কেন্দ্রীয় নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী মানেকা গান্ধী। এবং অন্য উপায় না দেখে বিঁধলেন মহারাষ্ট্র সরকারকেই। যে–সরকার চালাচ্ছে তাঁরই দল। তিনি জানান, বাঘিনিটিকে ‘নৃশংস ভাবে’ মারা হয়েছে। এটা স্পষ্টতই অপরাধ। অবনীকে মারার নির্দেশ দেওয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
মহারাষ্ট্রের বোরাটি জঙ্গলের ‘নরখাদক’ বাঘিনি অবনী। ১৩ জনকে মারার দায় ছিল তার ঘাড়ে। দু’বছর ধরে তাকে পাকড়াও করার চেষ্টা চলছিল। ধরা পড়েনি অবনী। শেষে শুক্রবার মহারাষ্ট্রের ইয়াভতমলে অবনীকে গুলি করে মারেন শার্প–শুটার আসগর আলি। তার বাবা নবাব শাফাত আলিও শার্প–শুটার।
সূত্রের খবর, অবনীর শরীরে ঘুম পাড়ানোর ওষুধ দেওয়ার যে ডার্ট, তার ক্ষত রয়েছে। কিন্তু সেটা দূর থেকে ছোঁড়া হয়নি। দেখে মনে হচ্ছে কেউ হাতে করে সেটা অবনীর শরীরে বিঁধে দিয়েছে। গুলি করে মারার পরে। অর্থাৎ ঠান্ডা মাথায় বাঘিনিটিকে মারা হয়েছে। ফরেনসিক এবং ব্যালিস্টিক পরীক্ষায় সেটা প্রমাণ হতে পারে।
মানেকা একের পর এক টুইটে বেঁধেন মহারাষ্ট্র সরকারকে। তিনি লিখেছেন, ‘ইয়াভাতমলে নৃশংস ভাবে বাঘিনিটিকে মারা হয়েছে। তাতে আমি গভীর ভাবে মর্মাহত। এটা অপরাধ ছাড়া কিচ্ছু নয়। প্রাণীদের প্রতি কোনও রকম মায়া–মমতা যে নেই, তার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত হিসেবে এই ঘটনাকে তুলে ধরব, আইনগত ভাবে, ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে এবং রাজনৈতিক ভাবে।’ মহারাষ্ট্রের বনমন্ত্রী সুধীর মুনগান্তিওয়ারই বাঘিনিটিকে মারার নির্দেশ দিয়েছেন, এ কথাও উল্লেখ করেন মানেকা।
মুনগান্তিওয়ারের সমালোচনায় তিনি বলেন, ‘এটা পুরোপুরি বেআইনি। বন দপ্তরের কর্মীরা ঘুম পাড়ানোর ওষুধ ব্যবহার করতে পারতেন। বাঘটাকে ধরে আলাদা রাখা যেত। তা না করে মুনগান্তিওয়ারের নির্দেশে বাঘিনীটিকে মেরে দিলেন। আসগরের বাবা শাফাত আলি খান চন্দ্রপুরা, মহারাষ্ট্রে ৩টি বাঘ, ১০টি লেপার্ড, কয়েকটা হাতি এবং ৩০০ বন্য বরাহ মেরেছেন। উনি একজন অপরাধী, হায়দরাবাদের একটি খুনের মামলায় দেশদ্রোহীদের বন্দুক সরবরাহ করার অভিযোগ রয়েছে ওঁর বিরুদ্ধে।’
সরব শিবসেনাও। তাদের দলীয় প্রতীক বাঘ। বাঘিনি–হত্যায় শিবসেনার যুব শাখার সভাপতি আদিত্য ঠাকরের প্রশ্ন, চোরাশিকারি আর ট্রফির নেশায় যাঁরা পশু মারে, তাদের সঙ্গে সরকারি কর্তাদের ফারাক কোথায়?
বিরোধীদের পাশাপাশি দলেরই সাংসদ তথা মন্ত্রীই যেভাবে বিজেপি শাসিত মহারাষ্ট্র সরকারকে তুলোধোনা করছেন, এতে বিজেপির অন্দরের অসন্তোষও স্পষ্ট। বিপাকে পড়ে সরকার এখন অবনীর দুই শাবকের জন্য কী ব্যবস্থা নেয়, সেটাই দেখার।