দেশে আছড়ে পড়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। আর তার জেরে প্রতিদিনই ঝড়ের গতিতে বাড়ছে দেশের দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা। ইতিমধ্যেই সর্বকালের সব রেকর্ড ভেঙে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যায় নতুন নজির গড়েছে ভারত। লম্বা হচ্ছে মৃত্যু মিছিলও। এই পরিস্থিতিতে কার্যত নাজেহাল অবস্থা গোটা দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার। কারণ যত তীব্র হচ্ছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ, ততই বাড়ছে অক্সিজেনের জন্য হাহাকার। একাধিক রাজ্য থেকেই অক্সিজেনের অভাবে বিপদ সংকেত দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রের সাহায্যও চেয়েছে অনেকেই। এর জেরে প্রবল চাপে পড়েছে মোদী সরকার।
উল্লেখ্য, বিরোধী দলগুলির পাশাপাশি সর্বোচ্চ আদালতও কেন্দ্রীয় সরকারকে করোনা নিয়ে ভর্ৎসনা করায় চরম অস্বস্তিতে পড়ে বৃহস্পতিবারই তড়িঘড়ি অক্সিজেন নিয়ে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ওই বৈঠকে সরকারি আধিকারিকদের তিনি নির্দেশ দেন, যেভাবেই হোক অক্সিজেন উৎপাদনকে এখন যুদ্ধকালীন তৎপরতায় বাড়াতে হবে। রাজ্যগুলির সঙ্গে কোনও চাপানউতোরে না গিয়ে তাদের সঙ্গে যেন সমন্বয় রক্ষা করা হয়, সেই নির্দেশই দিয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে রাজ্য তথা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যাতে কোনওভাবে অক্সিজেন সাপ্লাইয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা না হয়, সেটাও নিশ্চিত করতে বলেন তিনি। রাজ্যগুলিকে মোদী বলেন, অক্সিজেন অথবা ওষুধের মজুতদারির বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হোক।
এদিকে অক্সিজেন নিয়ে যেমন হাসপাতালে হাসপাতালে চরম হাহাকার শুরু হয়েছে, তেমনই বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে চরম বিবাদ ও সংঘাতও চলছে। হরিয়ানার পুলিশ দিল্লী যাওয়ার পথে অক্সিজেন ট্যাঙ্কারকে আটকে রেখেছে। উত্তরপ্রদেশ আটকে দিয়েছে বিহারের অক্সিজেনকে। পরিস্থিতি এতই ঘোরালো হয়ে ওঠে যে বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক বিপর্যয় মোকাবিলা আইন কার্যকর করেছে অক্সিজেন সাপ্লাই নিয়ে। অক্সিজেনের আন্তঃরাজ্য সরবরাহ কেউ মাঝপথে আটকালে কঠোর ব্যবস্থার হুমকি দিয়ে সার্কুলার জারি হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের আধিকারিকরাও জানিয়েছেন, ২১ এপ্রিল পর্যন্ত রাজ্যগুলিকে দৈনিক ৬৮৮২ মেট্রিক টন করে অক্সিজেন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু এত ব্যবস্থা ও বৈঠক সত্ত্বেও দেশজুড়ে সবথেকে বড় হাহাকার অক্সিজেন নিয়েই।
গতকাল, বৃহস্পতিবার দিনভর দিল্লী, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আসতে থাকে একের পর এক ফোন। প্রত্যেকেরই এক আকুতি, আর মাত্র কয়েক ঘন্টার মতো অক্সিজেন স্টক রয়েছে। এমনকী বিভিন্ন রাজ্যের বহু হাসপাতালেও দেখা যায় বৃহস্পতিবার অক্সিজেনই নেই। শুধু তাই নয়। সোশ্যাল মিডিয়াতেও দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন রাজ্যের হাসপাতালের ডাক্তাররাই কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। তাঁরা হাতজোড় করে জানাচ্ছেন, চোখের সামনে রোগীদের শ্বাসকষ্টের মৃত্যু আর দেখতে পাচ্ছেন না। দিল্লী, নয়ডা, ভোপাল, জয়পুর, পাঞ্জাব, হরিয়ানায় বহু হাসপাতালে রোগী ভর্তি নেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয় অক্সিজেনের অভাবে।