“এখন বাংলায় এলেই দিল্লী থেকে প্রশ্ন করা হচ্ছে, বাংলায় কেন যাচ্ছি? কিন্তু দিল্লীর সরকার তো দিল্লিতে নেই, বাংলায় পড়ে আছে। তাই তাদের খুঁজতে বাংলায় আসছি। দিল্লীতে তো এখন কৃষকরা বসে রয়েছে। নির্বাচনী প্রচারে প্রায় প্রতিদিনই প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে কেন্দ্রের তাবড় মন্ত্রীরা বাংলায় পড়ে রয়েছেন।” বৃহস্পতিবার বাংলা নববর্ষের দিন আসানসোলের রাজপথে ট্রাক্টর র্যালির পর সভা থেকে এমনই মন্তব্য করেন কৃষক আন্দোলনের নেতা রাকেশ টিকাইত।
রাকেশ বলেন, “ভোটের পর দিল্লীর বিজেপি নেতাদের আর দেখা পাবেন না। আবার আসবে একেবারে ২০২৪ সালে। পাঁচ মাস ধরে কৃষকরা দিল্লীতে আন্দোলন করছেন। তাঁদের কথা শোনার সময় হয়নি। এখানে বাংলা দখল করতে এসেছে। এদের ভোটেই হারাতে হবে তাই এসেছি। তিনি বলেন, এদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ট্রাক্টর, ট্যাঙ্ক আর ট্যুইটার।” বাংলার কৃষকদের ট্রাক্টর র্যালি করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “কৃষক যখন রাস্তায় ট্রাক্টর নিয়ে যাবে, এই দেশ বিক্রি করা লোক ভয় পাবেন। কেন্দ্রীয় সরকার সেনাবাহিনীতেও কর্মচ্যুতি চায়। এদের মিথ্যা প্রচার প্রচার ফাঁস করতে ট্যুইটারেও সরব হতে হবে।” এদিন আসানসোলে এসে বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হন নর্মদা সহ দেশের বহু আন্দোলনের মুখ মেধা পাটেকর সহ অন্যান্য কৃষক নেতারা। এদিন আসানসোলের তিনটি জায়গায় তাঁরা কর্মসূচী করেন।
নতুন বছরের পয়লা দিনেই আসানসোলে তীব্র দাবদাহে জেলা প্রশাসন ভবনের কাছ থেকে ভগৎ সিংহ মোড় হয়ে জিটি রোড ধরে আসানসোল বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত ট্র্যাক্টর চালিয়ে আসেন রাকেশ টিকায়েত। অন্য ট্রাক্টরে চেপেছিলেন মেধা পাটেকর। ব্যস্ত সময়ে জিটি রোডের উপর কৃষকদের এই ট্রাক্টর র্যালি সাড়া ফেলে খনি শহরে। বাসস্ট্যান্ড হয়ে রাহা লেন মোড়ের কাছে মিউনিসিপ্যাল পার্ক পর্যন্ত ট্রাক্টর নিয়ে হাজির হন। প্রথমে বিহারের কৃষিনেতা নরেন্দ্র সিং বিজেপি সরকারকে হটানো, তৃতীয় স্বাধীনতা সংগ্রাম আখ্যা দেন। তিনি বলেন, “ইংরেজদের বিরুদ্ধে আন্দোলন প্রথম। ইন্দিরা গান্ধীর জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে জয়প্রকাশজির জয় দ্বিতীয় স্বাধীনতা যুদ্ধ আর এটি তৃতীয়। দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে যেভাবে বাংলা নেতৃত্ব দিয়েছিল, এবারও তাঁদের এগিয়ে যেতে হবে। যে বিজেপিকে হারাতে পারবে, তাকে ভোট দিন।” একইভাবে আর এক নেতা অভীক সাহা বলেন, ধর্ম নিয়ে বিজেপি দেশভর তাণ্ডব করতে চাইছে।
এরপর বলতে উঠে বিজেপিকে তুলোধোনা করেন মেধা পাটেকর। তিনি বলেন, “গেরুয়া ত্যাগের রং, কোনও পার্টির নয়। সব জায়গায় শিক্ষার গেরুয়াকরণ শুরু হয়েছে। মেরুকরণ করেই গুজরাত থেকে দিল্লী এসেছে। এখন আবার দিল্লী থেকে বাংলায় আসতে চাইছে। আপনাদের ওঁকে বাংলা থেকে দিল্লী পাঠাতে হবে। তারপর দিল্লী থেকে গুজরাত। বাংলার মেয়েদের বুঝতে হবে, ওরা এলে হিংসা বাড়বে। হাথরাস, উন্নাও, আজমগড়ের ঘটনা শুনেছেন। ওরা সমাজকে টুকরো টুকরো করতে চায়। বাংলায় পা রেখে জমি অপবিত্র করছে। গোডাউন থেকে কারখানা সব বেসরকারি হাতে তুলে দিচ্ছে। এরা আবার বাংলায় এসে দুর্নীতির কথা বলে। এরা দুর্নীতিগ্রস্ত, অত্যাচারী।” এরপরই দেশের কৃষক আন্দোলনের মুখ হয়ে ওঠা রাকেশ বিজেপিকে আক্রমণ শুরু করেন। তিনি বলেন, “এটা আর কৃষক আন্দোলনে সীমিত নেই। গণ আন্দোলনের রূপ নিয়েছে। এখানকার ব্যবসায়ী, শ্রমিক সবাই সমস্যায় রয়েছেন। জিএসটি নিয়ে আসানসোলের ব্যবসায়ীরা সমস্যায় পড়েছেন। নোটবন্দিতে নাকাল হয়েছেন।” শীতলকুচি কাণ্ড নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তাঁরা বলেন, “সিআরপিএফ কেন্দ্রের পুলিশ। আর সব সংবিধানিক প্রতিষ্ঠানেই কেন্দ্রীয় সরকারের অনুপ্রবেশ রয়েছে। সিবিআই, আরবিআই থেকে নির্বাচন কমিশন। ওই ঘটনার সঠিক তদন্ত প্রয়োজন।”