সোমবার কমিশন নিষেধাজ্ঞা জারি করার পর মঙ্গলবার প্রচারের কাজ থেকে সারাদিন দূরেই ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার আজ সকালে মেয়ো রোডে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে ধর্নায় বসেছিলেন তিনি। মঙ্গলবার রাত ৮টার সময় নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা শেষ হওয়ার পরেই বারাসতে জনসভায় অংশ নিলেন তিনি।
নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তকে একহাত নিয়ে মমতা বলেন, “আমাকে আঘাত করলে, আমি প্রত্যাঘাত করি। ৭২ ঘণ্টা আগে প্রচার বন্ধ, তার আগে আমাকে ২৪ ঘণ্টা প্রচার থেকে সরিয়ে নেওয়া হল, মানে আমাকে প্রচারই করতে দেওয়া হল না। এর বিচার মানুষ করবে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, আমি ভয়ে ঘরে ঢুকে যাওয়ার লোক নই। আমি লড়াই করব। আমাকে এত ভয় কিসের? সারা দেশের এজেন্সি নিয়ে নেমেছেন আপনারা, তাও আমাকে এত ভয়? ভারত সরকারের যত এজেন্সি, সবই আছে বিজেপির আছে। কিন্তু তাও হারবে, কারণ আমি স্ট্রিট ফাইটার। আমি যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে লড়াই করি।” পাশাপাশি দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকেও কটাক্ষ করেন তিনি। “অমিত শাহকে ফটোশপ করতে হচ্ছে। একটা বাড়িতে গিয়ে ছবি তুলে বলছে, দরজায় দরজায় ঘুরছে। কিন্তু একটা মিটিং করে এমন করে দেখাবে, যেন সব জায়গায় মিটিং করছে।” জানান মমতা।
পাশাপাশি মোদীকে নিশানা করে তিনি বলেন, “বিজেপির সিন্ডিকেট, মোদী আর অমিত শাহ। জলপাইগুড়িতে গিয়ে বলছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজবংশীদের নিয়ে কিছু বলছেন না। কিন্তু আমি তো পাঁচজনেরই নাম লিখেছি। দার্জিলিংয়ে গিয়ে এনআরসি-র কথা অস্বীকার করেছে। বলছে, আমি মিথ্যে বলেছি। কিন্তু আমি মিথ্যে বলিনি। রাজবংশীদের কাছে গিয়ে মমতার নামে খেপিয়ে তুলছে। অন্য সময় মতুয়াদের কথা মনে পড়ে না। নির্বাচনের সময় মতুয়া দরদ দেখানো হচ্ছে। চ্যালেঞ্জ করছি, আমি যদি মতুয়াদের জন্য কিছু না করে থাকি, তাহলে রাজনীতি ছেড়ে দেব। মতুয়া, অনুকুল ঠাকুর ভক্তদের জন্য অনেক কাজ করা হয়েছে। সত্যি প্রমাণ করতে না পারলে আমিও কান ধরে ওঠবোস করতে রাজি। ওরা জানে, মিহিদানা কী ভাবে তৈরি হয়? সীতাভোগ কী ভাবে তৈরি হয়? হিন্দু মুসলমানে ভাগাভাগি করা হচ্ছে। ওখানে চারজন পুলিশের গুলিতে মারা গিয়েছে, একজন মারা গিয়েছে দুষ্কৃতীদের গুলিতে। মাথাভাঙার প্রার্থীকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। আমি কাল সকালে শীতলকুচি যাবো।”
জনগমণের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা, “উন্নয়নের জন্য ভোট দিন। এত লোকের কোভিড হয়েছে, বিজেপির পার্টি অফিস থেকে টিকা দেওয়া হচ্ছে। সরকারটাকে দলের ভবনে নিয়ে গিয়েছে। আমাদের এখানে তেমন নয়। আমরা রাস্তায় থাকি। যখন কোভিড হয়েছিল, কোথায় ছিলে? প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর জন্য কোভিড বেড়েছে দেশে। আমি টিকার জন্য কেন্দ্রকে চিঠি লিখেছি, তাও দেওয়া হয়নি। আমি চাই, সবাইকে বিনামূল্যে কোভিড টিকা দিতে। বুধবার থেকে বিনামূল্যে কোভিড টিকা কলকাতা-সহ শহুরে এলাকায়।” ভোটের সময় মোদীর সভা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। “নির্বাচনের দিন কেন প্রধানমন্ত্রী সভা করবেন? দরকার হলে আমিও করব না। উনি ভুল পথে চালিত করছেন সাধারণ মানুষকে। বাংলা বলতে পারে না, এ দিকে রাজ্য দখল করবে বিজেপি। বাংলা বলে না, বলে বাঙ্গাল।” জানান মুখ্যমন্ত্রী।
পাশাপাশি আশ্বাসো দেন, বিনামূল্যে রেশন এ বার বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে যাবে। “বছরে দুয়ারে সরকার হবে একাধিক বার হবে। নরেন্দ্র মোদী সরকার লক্ষ্মীর ভাণ্ডার কেড়ে নিয়েছে। মা বোনেদের সামাজিক সুরক্ষা হিসাবে ভাতা দেওয়া হবে। বারাসতের রাস্তা ঠিক হয়েছে। দক্ষিণেশ্বর মেট্রো আমিই করেছিলাম। মাত্র ১০ মিনিটে সারা কলকাতা ঘুরে নেবেন। তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোটটা দেবেন। এ বারের নির্বাচন বাংলার ইজ্জতের নির্বাচন। এরা রেল বিক্রি করে দিয়েছে। গ্যাসের দাম বিপুল করা হয়েছে। এদের মতো অসৎ লোক নেই। বাংলার মাটি সোনার মাটি। আমি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের মতো লড়াই করে যাবো। আরও চার দফায় ওরা আরও জ্বালাবে। যতক্ষণ আমার বইবে ততক্ষণ লড়ব।” বার্তা মমতার।