নন্দীগ্রামে আক্রান্ত হওয়ার পরেও দমে যাননি তিনি। হুইল চেয়ারে চেপেই ভোট প্রচারে রাজ্যের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ছুটে বেড়াচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আক্রমণ শানাচ্ছেন বিজেপির বিরুদ্ধে। এদিন রানাঘাটের সভাতেও তার অন্যথা হল না।
এদিনের সভা থেকে বিজেপিকে আক্রমণ করে মমতা বলেন, চারটে লোককে গুলি চালিয়ে মারলো। তারপর বলছে আরো গুলি চালিয়ে দাও, বুকে গুলি চালাল, রাজনৈতিকভাবে এই নেতাদের ব্যান করা উচিত, যারা গুলি করানোর পক্ষে সওয়াল করে, লজ্জা করে না এদের? এক হাতে বিজেপির ঝান্ডা অন্য হাতে ডান্ডা।’
তাঁর প্রশ্ন, ‘ভোট কাদের দেবেন, যে উন্নয়ন করেছে তাদের জন্য, না গুলি চালানোর জন্য?’ মমতা জানান, ‘মা-বোনেরা, আমার ভাঙা পা নিয়েই সব জায়গায় যাচ্ছি। বিজেপির পরিকল্পনা ছিল আমাকে আঘাত করা যাতে আমি না বেরোতে পারি। চোটের জন্য আমি তিন দিন হসপিটালে ছিলাম। তারপর এক মাস কন্টিনিউয়াস প্রচার করছি, কারণ আমি চাইনা বাংলা গুজরাত হয়ে যাক, বাংলা আমার মা, মাকে বাঁচাতে হবে।’
শীতলকুচির ঘটনা প্রসঙ্গে এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘শীতলকুচিতে যে ভাবে ভোটের লাইনে যে ভাবে গুলি চালিয়েছে। বিজেপিকে কেউ ক্ষমা করবেন না। ওরা হিন্দু-মুসলিম করে। মানুষ মারা গেলে হিন্দু-মুসলিম হয়? মানুষের রক্তে হিন্দু-মুসলমান হয়? এরা পারে না এমন কাজ নেই। ওদের একজন মহিলা সাংসদ নিজের গাড়ি নিজে ভাঙছিলেন। এরা নিজের লোককে নিজে মেরে দিতে পারে। তার পর হিন্দু-মুসলিম করবে।’
বিজেপিকে নিশানায় নিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘রাজনীতি করতে গেলে কথাবর্তা শেখা দরকার। বুঝে কথা বলা দরকার। রাজনীতি মানে করে খাওয়া নয়। বিজেপি মনে করছে রাজনীতি মানে গুলি করার অধিকার দেওয়া, এটা রাজনীতি নয়। চারটি লোককে ভোটের লাইনে গুলি করে মেরে নিল। তার পরেও বলছে ৮ জনকে গুলি করা উচিত ছিল। সবাইকে বুকে গুলি করে দাও। এরা অদ্ভূত। একটা রাজনৈতিক দল বুক দেখে গুলি চালিয়ে দিতে বলছে। এদের নিষিদ্ধ করা উচিত।’
তাঁর মতে, ‘মানুষের মানসিকতা বড় হওয়া দরকার, বাংলা ভালো জানলে অন্য ভাষা বোঝা যায়। আমি একুশে জুলাই দেখেছি। কিভাবে আমাদের ছেলেদের মেরেছিল সিপিএম দেখেছি। আর এখন এরা চারজনকে মেরে বলছে আটজনকে মেরে দিতে হতো। তাই এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে বাংলাকে বাঁচানোর। মনে রাখবেন আমি আপনাদের পাহারাদার।’
তিনি জানান, ‘আমি সরকারি পয়সা, পেনশন নিই না। আমি মানুষকে ভালোবাসি, সমাজ সেবাই আমার কাজ। ওরা প্ল্যান করে মেরেছে কুড়ি বাইশ বছরের ছেলেগুলোকে। কারা কারা গুলি চালিয়েছে, কি কি প্ল্যান করেছে, কিভাবে একটা মেয়েকে আগে পাঠিয়েছিল, বিজেপি কিভাবে নিজের লোককে মেরেছে, সব তদন্ত হবে। ওরা আমার রাজবংশী প্রার্থী গিরীন্দ্র নাথ বর্মনকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে।’
মমতার কটাক্ষ, ‘ওরা গেরুয়া পরে, মুখে পানবাহার নিয়ে বলে হরে কৃষ্ণ হরি হরি, মা-বোনেদের অসম্মান করি। হরে কৃষ্ণ হরি হরি, ডিটেনশন ক্যাম্পে লোক মারি। ভয় দেখাল ভোট দিতে যাবেন, ভোট না দিলে এনআরসি করে ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেবে।’ তাঁর হুঙ্কার, ‘আমি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের মতো লড়াই করি। বুকের পাটা আছে আমার। বিজেপি-র ধমকানি-চমকানিতে ভয় পাই না।’