জখম পা নিয়ে হুইল চেয়ারে চেপেই রাজ্যের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ছুটে বেড়াচ্ছেন তিনি। একের পর এক সভা থেকে ঝড় তুলছেন। জেলার ৫টি বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থীদের জন্য শুক্রবার পূর্ব বর্ধমানের তিনটি জনসভা করেছেন তৃণমূল নেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর প্রতিটি সভা থেকেই বিজেপিকে বিঁধেছেন তিনি।
এদিন কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের দিকে আঙুল তুলে মমতা বলেন, রেল, কয়লা, সেইল, এমটিএনএল, বিএসএনএল, এয়ার ইন্ডিয়া সব বিক্রি করে দিচ্ছে। বীমা বিক্রি করে দিচ্ছে। আগামী দিনে আপনার টাকা পাবেন কিনা কেউ জানে না। গ্যাসের দাম কত? কেরোসিনের দাম কত? ভোটের আগে ক্যাশ দিচ্ছে। ওরা ১৫ লক্ষ টাকা করে দেবে বলেছিল না? চাষীদের মিথ্যে কথা বলছে। আমরা তালিকা পাঠিয়েছি কিন্তু ওরা টাকা দেয়নি। ৫০০ টাকার ক্যাশ না বিনা পয়সায় গ্যাস চাই।’ আরও সুর চড়িয়ে তিনি বলেন, ‘কৃষকদের জন্য কালো আইন আনলে কেন বিজেপি জবাব দাও। কৃষি আইন বাতিল করতে হবে। চাই না চাই না চোরেদের চাই না।চাই না চাই না দাঙ্গাবাজদের চাই না। চাই না চাই না মিথ্যেবাদীদের চাই না।’
সভায় আগত সকলের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘ভোট কিন্তু দিতে হবে নয়তো এনআরসি করে নাম বাদ দিয়ে দেবে। অসমে ১৪ লক্ষ বাঙালির নাম বাদ দিয়েছে। ডিটেনশন ক্যাম্পে রেখে দিয়েছে, ওখানে কিন্তু সব ধর্মের মানুষ আছে।’ তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘খেলা হবে, হাতা খুন্তি দিয়ে খেলা হবে। কেউ মারতে এলে তেড়ে যেতে হবে। আমরা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই। কিন্তু ওদের কাজ হচ্ছে অশান্তি করা যাতে মানুষ ভয় পেয়ে ভোট দিতে না যায়।’ তাঁর আহ্বান, ‘বিজেপি চুলোয় যাক, বিদেয় হোক। বিজেপিকে মাঠের বাইরে বের করতে হবে। বিজেপি খালি হবে। খেলব, লড়ব, গড়ব, জিতব, বিজেপিকে হারাবো। এই বাংলায় বিজেপি স্থান নেই। বাংলাকে রক্ষা করুন মা-বোনেরা বাংলা কে বাঁচান।’ ছড়া কেটে বলেন, ‘মেয়েরা দিচ্ছে উলুধ্বনি ভাইয়েরা দিচ্ছে তালি, আগামী ১৭ তারিখ নির্বাচনে বিজেপিকে করতে হবে খালি।’
এদিন নির্বাচন কমিশনকেও একহাত নেন মমতা। তাঁর অভিযোগ, ‘আমাদের কোনও কথা শুনছে না নির্বাচন কমিশন। বিজেপি যা বলছে তাই করছে। মনে হচ্ছে ৩৬৫ ধারা করে নির্বাচন চলছে। প্রধানমন্ত্রী এত উল্টোপাল্টা কথা বলেন কোনও নোটিস দেয় না। নির্বাচনের দিন সভা করেন। অমিত শাহ যেটা বলে যায় কোড ভায়োলেট হয় না, মমতা ব্যানার্জি মানুষের কাছে কিছু বললেই কোড ভায়োলেট হয়ে যায়। অনেক অত্যাচার চলছে তৃণমূলকে খতম করার জন্য। পারবেন না আমার সাথে মানুষ আছে।’ কেন্দ্রীয় বাহিনীকে নিয়ে তাঁর বক্তব্য, যারা দেশের জন্য কাজ করে সেই সিআরপিএফ জওয়ানদের আমি স্যালুট করি, কিন্তু যারা অমিত শাহের কথায় কাজ করে তাদের আমি সম্মান করি না।
এদিন মমতা জানান, দিদি কাজ করেছে আরো করবে আগামী দিনে অনেক রাস্তা সেতু, স্কুল-কলেজ হবে। দিল্লি কিছু করে না শুধু মুখে বলে আমরা করে দেখাই। বাংলায় তৃণমূল না থাকলে কোনও সুবিধা পাবেন না। স্বাস্থ্য ফ্রি, শিক্ষা ফ্রি, খাদ্য ফ্রি। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আমাদের অনেক প্রকল্প আছে। ১০০দিনের কাজে আমরা এক নম্বরে। আমরা মাটির সৃষ্টি প্রকল্প চালু করেছি। অনুর্বর জমিতে চাষ করার ব্যবস্থা করব। ২৫ হাজার হেক্টর জমি চাষ যোগ্য হয়ে যাবে। তাঁর প্রতিশ্রুতি, আগামী দিনে অনেক চাকরি হবে। ডানকুনি থেকে বর্ধমান হয়ে পুরুলিয়া রঘুনাথপুর পর্যন্ত ফ্রেট করিডর হবে। রঘুনাথপুরের শিল্পনগরী হবে। তিনি এ-ও জানান, আমরা ৪,০০০ কোটি তখন একটা প্রকল্প চালু করেছি। দামোদর নদীর আশেপাশে যত এলাকা আছে আমরা সেখানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ করব।
এখানেই শেষ হয়নি মমতার তালিকা। তিনি বলেন, আগামী দিনে আমরা বিনা পয়সায় দুয়ারে দুয়ারে রেশন পৌঁছে দেব। মায়েরা নিজেদের সংসারের জন্য ঢেলে দেন। তাই আমাদের সরকার তাদের একটা লক্ষ্মীর ভান্ডার তৈরি করে দেব। বাড়ির মহিলাদের হাত খরচের জন্য প্রতি মাসে আমরা ৫০০ থেকে হাজার টাকা দেবো কন্যাশ্রী মেয়েরা আমাদের গর্ব ওরা বর্ধমানের কন্যাশ্রী ক্লাব তৈরি করেছে। আগামী দিনের ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশুনার জন্য ১০ লক্ষ টাকা ক্রেডিট কার্ড করে দেবো মা-বাবার কোন চিন্তা থাকবে না। তিনি এ-ও জানাতে ভোলেননি যে উত্তরবঙ্গের সাথে দক্ষিণবঙ্গকে জোড়ার জন্য একটা নতুন রাস্তা তৈরি করছে রাজ্য সরকার। বাংলাদেশ ভুটান নেপালের সাথেও যে রাস্তা জুড়ে যাবে।