সাম্প্রতিক কালে রাজনৈতিক কারণে বারবারই খবরে তাদের দাবি-দাওয়ার কথা উঠে আসলেও, বহুদিন ধরেই নাগরিকত্ব দাবি করে আসছে মতুয়া সমাজ। সেই ১৯৯৭ সালে উদ্বাস্তু মানুষের উন্নয়নে ১২টি ওয়ার্ড নিয়ে গড়ে ওঠে কুপার্স ক্যাম্প নোটিফায়েড পুরসভা। এলাকায় বাংলাদেশ থেকে ছিন্নমূল হয়ে আসা মানুষের বসবাস। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই আবার মতুয়া মতাবলম্বী। বিগত দিনে লোকসভা, বিধানসভা ও পুরসভা ভোটের অভিজ্ঞতা রয়েছে প্রবীণ বাসিন্দাদের। কিন্তু বিধানসভা ভোটের কালে তাঁরা রাজনৈতিক আলোচনাকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন। কারণ, বিজেপির নির্বাচনী পথসভায় নাগরিকত্ব ইস্যু নিয়ে বক্তব্য শোনার পর ঘুম ছুটেছে অনেক উদ্বাস্তু, মতুয়াদের। শেষ বয়সে ডিটেনশন ক্যাম্পে ঠাঁই হওয়ার আতঙ্কই এখন তাড়া করছে বাসিন্দাদের।
সকলের মনেই এখন একই প্রশ্ন, আসামে ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি করে দেশের নাগরিকদেরই বন্দী করে রাখা হয়েছে। বিজেপি রাজ্যে ক্ষমতায় এলে আমরা কোথায় যাব? আসামের মতো পরিস্থিত এ রাজ্যেও হবে না তো? মাত্র ১৪ বছর বয়সে বাংলাদেশের বরিশাল থেকে কাকার সঙ্গে হাত ধরে এ দেশে এসেছিলেন সন্তোষ গায়েন। তারপর ঠাঁই হয় কুপার্সের উদ্বাস্তু কলোনিতে। তিনি বলেন, আমি মতুয়া সমাজের লোক। এদেশে আসার পর কাঠমিস্ত্রির কাজ করেছি। স্ত্রীকে আগেই হারিয়েছি। এখন শরীরে শক্তি নেই। মেয়ের সংসারে ঠাঁই হয়েছে। শেষ বয়সে ডিটেনশন ক্যাম্পে দিন কাটাতে হবে, এটা ভাবলেই ভয় করছে।
প্রায় ৪০ বছর কুপার্সে আছেন ব্যবসায়ী আশিস সরকার। তিনিও মতুয়া। তিনি বলেন, গত সোমবার কুপার্স বাজারে জনসভা করেছিল বিজেপি। সেখানে নেতারা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, এনআরসি এ রাজ্যে লাগু হবে। কিন্তু কোনও নাগরিককে দেশ ছাড়া হতে হবে না। অর্থাৎ ওরা যে আমাদের ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠাবে তা সরাসরি না বললেও বক্তব্যে সেই ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে। এমনকী রাজ্য সরকারের দেওয়া নিঃশর্ত জমির দলিলকে ওরা গুরুত্ব দিতে চাইছে না। নাগরিকত্বের জন্য ওরা যে কাগজ চাইছে তা কুপার্সের ৯০ শতাংশ মানুষের নেই। এখন ওই কাগজ আমাদের পক্ষে জোগাড় করা সম্ভব নয়। ফলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই এখন আমাদের একমাত্র ভরসা। সকলেই এক সুরে বলছেন, মোদীর ‘সোনার বাংলা’ আমরা চাই না। আমরা দ্বিতীয়বার ছিন্নমূল হওয়ার যন্ত্রণা সহ্য করতে পারব না।