ভোটের আগে তৃণমূলে ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া শুভেন্দু অধিকারী থেকে শুরু করে গেরুয়া শিবিরের একের পর এক কেন্দ্রীয় নেতা, একুশের ভোটযুদ্ধে তাঁর বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাতে গিয়ে সকলেই বলছেন, ‘তোলাবাজ ভাইপো’। কিন্তু এই অভিযোগকে হেলায় উড়িয়ে দিচ্ছেন তৃণমূল সাংসদ তথা দলের যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বারবারই প্রকাশ্য জনসভা থেকে চ্যালেঞ্জ করে বলছেন, ‘বিজেপির যদি ক্ষমতা থাকে, তাহলে আমার তোলাবাজির প্রমাণ দিক, আমি নিজেই ফাঁসির দড়িতে ঝুলে যাব।’ আর তাঁর এই লড়াকু মেজাজের কারণেই তিনি হয়ে উঠেছেন বঙ্গ রাজনীতির আকাশে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।
প্রসঙ্গত, আজ, মঙ্গলবার অভিষেকের নিজের ‘গড়’ দক্ষিণ ২৪ পরগনার বড় অংশে ভোট হচ্ছে। আর বাংলার রাজনৈতিক মহল জানে, দিল্লীর মসনদ দখলের দরজা যদি হয় উত্তরপ্রদেশ, তাহলে বাংলা দখলের দরজা অবশ্যই দক্ষিণ ২৪ পরগনা। আর সেই জেলাতেই এবার বাজিমাত করার সুবর্ণ সুযোগ অভিষেকের কাছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার নানা প্রান্তে এখন যে হারে বিজেপির বাড়বাড়ন্ত, তাতে ভোটে না লড়লেও এবারের ভোট অভিষেকের কাছে নিঃসন্দেহে এক বড় চ্যালেঞ্জ। এই জেলার সবকটি কেন্দ্রেই তৃণমূল জিতলে দলে তাঁর আধিপত্য যে প্রশ্নাতীত জায়গায় পৌঁছে যাবে, তা বলাই বাহুল্য।
প্রসঙ্গত, তাৎপর্যপূর্ণভাবে মাত্র ২৬ বছর বয়সে প্রথম সাংসদ হন অভিষেক। তারপর থেকেই ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ ধীরেধীরে ‘গ্রিপ’ করতে শুরু করেন দল ও জেলা। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় রয়েছে ৩১ বিধানসভা আসন। ২০১৬ সালের ভোটের হিসেব ধরলে ২৯ আসনে জয়ী তৃণমূলের একচেটিয়া আধিপত্য। ফলে সেই জেলা নিয়ে দুশ্চিন্তার অবকাশ থাকার কথা নয় শাসক দলের। কিন্তু ২০১৯-এর লোকসভা ভোট, এবং তারপর থেকে ধীরেধীরে গেরুয়া-উত্থান অভিষেককে নতুন করে ছক সাজাতে বাধ্য করেছে।
তবে মমতার প্রধান সেনাপতি হিসাবে অভিষেকের ভূমিকায় সন্তুষ্ট দল। অধিকাংশ নেতা-কর্মীরাই বলছেন, ‘যে কোনও দলই ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তৈরি করতে-করতে চলে। তৃণমূল যাঁদের ভবিষ্যৎ ভেবেছিল, তাঁদের অনেকেই তো গদ্দার-মীরজাফর হয়ে উঠল। সেই তুলনায় তো অভিষেক দলঅন্ত প্রাণ।’ তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘অভিষেক এই মুহূর্তে দেশের মধ্যে অন্যতম প্রতিভাধর রাজনীতিক। তিনি যে রাজনীতিটা করছেন, তা বিজেপি নেতাদের কাছে চাপের হয়ে উঠছে। অভিষেক বারবার বিজেপির শীর্ষ নেতাদের চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন মুখোমুখি বিতর্কে আসতে, কিন্তু বিজেপি নেতাদের সেই সাহস নেই। তাঁরা ভুয়ো টেপ, অভিযোগ নিয়ে চেঁচাচ্ছেন।’