কাটছে না সমস্যা। প্রার্থী নিয়ে অসন্তোষের জেরে বিজেপিতে বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীর সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে। প্রচারেও পুরনো নেতা-কর্মীদের সেভাবে দেখা যাচ্ছে না। এতে চাপে পড়ে গিয়েছে বিজেপি নেতৃত্ব। শিলিগুড়ি সহ গোটা উত্তরবঙ্গেই এই সমস্যায় জর্জরিত পদ্মশিবির। স্বাভাবিকভাবেই উদ্বিগ্ন বিজেপির নেতৃত্ব। এই পরিস্থিতিতে শিলিগুড়ি বিধানসভা আসনে বিজেপির শিলিগুড়ি সাংগঠনিক জেলা কমিটির প্রাক্তন সম্পাদক ও মুখপাত্র চয়ন গুহ আমরা বাঙালির হয়ে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। তাঁর সমর্থনে পুরনো নেতা-কর্মীদের একটি বড় অংশ বিজেপি থেকে সরে গিয়েছেন।
ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি বিধানসভা আসনে শিখা চট্টোপাধ্যায়কে প্রার্থী করায় দলের পুরনো কর্মী অলোক সেন নির্দল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা করেছেন। তাঁর মনোনয়ন প্রত্যাহার করানোর জন্য অলোকবাবুকে বোঝাতে তাঁর বাড়িতে বিজেপি নেতৃত্ব বারবার যাচ্ছেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত অলকবাবু তাঁর সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছেন। চয়ন গুহও শিলিগুড়ি আসনে শঙ্কর ঘোষকে প্রার্থী হিসেবে মেনে নিতে পারেননি। তার প্রতিবাদেই তিনি বিজেপি ছেড়ে আমরা বাঙালির হয়ে শিলিগুড়ি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
মঙ্গলবার চয়নবাবু জানিয়েছেন, “বিজেপি প্রার্থী তালিকা দেখে মনে হচ্ছে রাজনীতিটা এখন কারও কারও কাছে বাণিজ্য হয়ে উঠেছে। এখানে নীতি-আদর্শের কোনও মূল্য নেই। তাই আমাদের মতো নীতি-আদর্শ আঁকড়ে থাকা নেতা-কর্মীদের কোনও মর্যাদা নেই। আর শঙ্কর ঘোষকে আমি নেতা হিসেবে মেনে নিতে পারব না। সেই জন্যেই মানুষের কাজ করতে বেরিয়ে এসেছি।” প্রসঙ্গত, বিজেপিতে রাজ্য স্তরে উত্তরবঙ্গের চারজন নেতা গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। সহ সভাপতি পদে বিশ্বপ্রিয় রায় চৌধুরী ও দীপেন প্রামাণিক আছেন। অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদক পদে রথীন্দ্র বসু রয়েছেন। আর বিজেপির সংখ্যালঘু সেলের রাজ্য সভাপতি আলি হোসেন। এবার এঁদের কেউ প্রার্থী হননি। বিজেপির প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর থেকে উত্তরবঙ্গে এই চার নেতাকেও সেভাবে দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে প্রচারে দেখা যাচ্ছে না। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে চর্চা শুরু হয়েছে। যা বিজেপি নেতৃত্বের অস্বস্তি আরও বাড়িয়েছে বলেই খবর।
যদিও দীপেন প্রামাণিক মনে করেন, এতে বিতর্ক খোঁজা ঠিক নয়। তিনি বলেন, “আমরা এই চারজন দলের নির্দেশ মতো বিভিন্ন জেলার নির্বাচনী দায়িত্বে রয়েছি। রথীন্দ্রবাবু ওবিসি মোর্চা ও অমিত শাহের সভার দয়িত্বে আছেন। আমি কোচবিহারের পর্যবেক্ষক এবং প্রধানমন্ত্রীর সভার দায়িত্বে রয়েছি।” তবে প্রার্থী নিয়ে দলের নিচুতলার নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বিক্ষোভ বাড়ছে। অনেক পুরনো কর্মী বসে গিয়েছেন তা মেনে নিয়েছেন দীপেনবাবু। তিনি বলেন, একটা দল যখন বড় হয় তখন এ ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। বিজেপি এবার রাজ্যে ক্ষমতায় আসছে, সেই জন্য টিকিট পাওয়ার দাবিদার অনেকে ছিলেন। যাঁরা টিকিট পাননি, তাঁদের ক্ষোভ থাকতেই পারে। কিছু জায়গায় আমাকে এই সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব দিয়েছে দল। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও এসে বৈঠক করছে। উল্লেখ্য, কোনও চেষ্টাতেই ক্ষোভ বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে। তাই বিকল্প পথ খুঁজছে পদ্মশিবিরের শীর্ষ নেতৃত্ব।