যতই ভোটের দিন এগিয়ে আসছে, বাংলাজুড়ে পাল্লা দিয়ে চড়ছে রাজ্য-রাজনীতির পারদ। মনোনয়নপত্র জমা ও স্ক্রুটিনির কাজ শেষ হওয়ার পর জোরকদমে প্রচারে নেমে পড়েছেন সব দলের প্রার্থীরা। রাজনৈতিক অস্ত্রে শান দিয়ে কৌশলগত আক্রমণ শানাচ্ছেন সব পক্ষ । ভোটের ময়দানে এক ইঞ্চি জমি ছেড়ে দিতে রাজি নন কেউই। আরামবাগের চারটি বিধানসভায় এবার জোরদার লড়াই হচ্ছে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে। শেষ মুহূর্তে কিছুটা রাজনৈতিক অক্সিজেন পেয়ে লড়াইয়ে আছে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থীরাও। সমানে সমানে লড়াই হচ্ছে পুরশুড়া, আরামবাগ, গোঘাটের মতো এলাকাগুলোতে। কিন্তু তুলনায় খানাকুলে কিছুটা ব্যাকফুটেই বিজেপি।
পুরশুড়ায় প্রচারে ঝড় তুলেছেন তৃণমূল প্রার্থী দিলীপ যাদব। বিজেপির বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর প্রার্থী চিরঞ্জিৎ বারিক নির্দল প্রার্থী হিসাবে দাঁড়ানোয় অস্বস্তিতে গেরুয়াশিবির। পুরনো বিজেপি কর্মীরা প্রকাশ্যে বিজেপির প্রার্থী বিমান ঘোষের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখছেন। যা নিয়ে দিলীপ যাদবের বক্তব্য, “অন্য দল নিয়ে ভাবছি না। এখানে ভোট হবে উন্নয়ন দেখে। উন্নয়নকে সামনে রেখে আমরা প্রচার করছি।” দিলীপ যাদব দক্ষ রাজনৈতিক সংগঠক। চষে বেড়াচ্ছেন পুরশুড়া বিধানসভার প্রতিটি এলাকা। সম্ভাব্য জয়ী হিসাবে তাকেই ধরা হচ্ছে।
পাশাপাশি, আরামবাগ থেকে তৃণমূলের হয়ে লড়ছেন সুজাতা মণ্ডল। প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সমানে সমানে লড়াই করে জয় ছিনিয়ে আনার অভিজ্ঞতা তাঁর ঝুলিতে আছে। ইতিমধ্যেই আরামবাগের আনাচে কানাচে প্রচারে ঝড় তুলেছেন। পুরনো ও নতুন কর্মীদের নিয়ে অনেকটাই ঘর গুছিয়ে ফেলেছেন। প্রচারে ঘরের মেয়ে হিসাবেও আরামবাগের মানুষের মন জয় করতে পেরেছেন। যা তাঁকে বিরোধী শিবিরের থেকে অনেকটাই এগিয়ে রাখছে। পাল্লা দিয়ে প্রচার করছেন বিজেপির প্রার্থী মধুসূদন বাগও। তবে দলের আভ্যন্তরীণ কোন্দল খানিকটা হলেও চিন্তায় ফেলেছে তাঁকে।
গোঘাটে তৃণমূল প্রার্থী গতবারের বিধায়ক মানস মজুমদার প্রচারে অনেকটাই এগিয়ে আছেন। সকাল সাতটা থেকে রাত ন’টা পর্যন্ত প্রচার করছেন তিনি। এলাকায় কাজের মানুষ হিসাবে তিনি জনপ্রিয়। রাজনৈতিক উত্তেজনা প্রবণ এই এলাকা বর্তমানে অনেকটাই শান্ত। উন্নয়নকে সামনে রেখে প্রচার করছেন। তিনি আশাবাদী গতবারের মতো এবারও মানুষ তাকে জয়ী করবেন। সে তুলনায় ফরোয়ার্ড ব্লকের গোঘাটের প্রাক্তন বিধায়ক বর্তমানে বিধানসভার বিজেপি প্রার্থী বিশ্বনাথ কারক কিছুটা পিছিয়ে আছেন প্রচারে। পুরনো বিজেপি কর্মীরা তার বিরুদ্ধে পথে নেমেছেন। বেশ কয়েকবার বিক্ষোভ প্রদর্শন হয়েছে বিজেপি পার্টি অফিসে। তাঁর বিরুদ্ধে উঠৈছে খুনের অভিযোগও। স্বাভাবিকভাবেই মাথাব্যথা বেড়েছে স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের।
পাশাপাশি, গোঘাটের সংযুক্ত মোর্চার ফরোয়ার্ড ব্লকের প্রার্থী শিবপ্রসাদ মালিক পাঁচ বারের বিধায়ক। অনেকটা দেরিতে প্রচার শুরু করেছেন। ভোট কাটাকাটিতে তৃণমূল ও বিজেপির বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারেন বলেও রাজনৈতিক মহলের মত। খানাকুল বিধানসভায় ভোটের প্রচার ও জয়ের ব্যাপারে অনেকটাই এগিয়ে আছেন তৃণমূল প্রার্থী মুন্সি নজিবুল করিম। এলাকার ভূমিপুত্র। খানাকুলের প্রতিটি এলাকায় হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ শাঁখ বাজিয়ে, মালা দিয়ে বরণ করেছে, উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন। তাতে মুন্সি নজিবুল করিম বলেন, “এখানে আমি জিতব কি না সেটা প্রশ্ন নয়। কত ভোটে জিতব সেটাই প্রশ্ন।” অন্যদিকে বিজেপি প্রার্থী সুশান্ত ঘোষের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন খানাকুলের বিজেপি কর্মীরাই। জনপরিচিতিহীন ও শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে দেখা গিয়েছে বিজেপি কর্মীদের। যা নিয়ে বেজায় অস্বস্তিতে বিমান ঘোষের কাছের মানুষ সুশান্ত ঘোষ।
আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির আদি ও নব্য গোষ্ঠীর লড়াই আরামবাগের চারটে বিধানসভায় প্রভাব ফেলতে চলছে। সে কথা বলছেন জেলার বিজেপি নেতারাই। বিমান ঘোষের হয়ে প্রচারে নামছে না বিজেপির আদি নেতা কর্মীরা। তাদের বক্তব্য, “অন্য জায়গাগুলোতে বিজেপির জয় চাইলেও পুরশুড়াতে বিমান ঘোষের পরাজয় চাইছি।” যা নিয়ে প্রবল অস্বস্তিতে জেলার বিজেপি নেতারা।