সম্প্রতি রাজ্য রাজনীতির আবহে চাওয়া আর পাওয়ার হিসেবে বেশ গরমিলটা লক্ষ্য করা গিয়েছে। এই গরমিল হয়ত চিরকালই ছিল, তবে লাভের আশায় এবং লোভের বশে তা যেন বেশি বেশি করে সামনে চলে আসছে। নিজের কী ভেবেছিলেন আর শেষ অবধি কী হল? এই দ্বন্দ্ব যে কবে কাটবে রাজনীতিকদের একাংশের, তা নিজেরাও জানেন না। বলা হচ্ছে তৃণমূলত্যাগী বিজেপি নেতাদের কথা, যাঁরা শিবির বদল করে বিজেপিতে গেলেও ভোটের টিকিট পাননি। ঘাসফুল শিবিরের প্রার্থী হতে না পেরে তড়িঘড়ি পদ্মশিবিরে নাম লিখিয়েও যাঁরা টিকিট পেলেন না, তাঁদের কি দু’কূলই গেল না? বঙ্গ-রাজনীতির ভোটরঙ্গে এসবই এখন অতি আবশ্যিক প্রশ্ন হিসেবে ফিরে ফিরে আসছে।
এই তালিকায় প্রথম নামটাই আসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অতি ঘনিষ্ঠ সহকর্মী সোনালি গুহ। সাতগাছিয়া বিধানসভা কেন্দ্রের কয়েকবারের বিধায়ক, রাজ্যের প্রাক্তন ডেপুটি স্পিকার একুশের ভোটে তৃণমূলের প্রার্থী হতে না পেরে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন। ঘটনার আকস্মিকতায় প্রথমদিকে হয়ত কিছু ঠিক করতে পারেননি, কিন্তু পরে তিনি বিজেপির শরণাপন্ন হয়েছেন। বলেছেন, “প্রার্থীপদ চাই না, শুধু একটু সম্মান চাই। তৃণমূলে অসম্মানিত হয়েছি। বিজেপিতে সাধারণ কর্মীর মতো কাজ করব।” মনে করা হচ্ছিল, এবার হয়ত একুশের ভোট ময়দানের সৈনিক হতে পারেন গেরুয়া শিবিরের সোনালি। কিন্তু নাহ, প্রার্থী হওয়ার শিকে মোটেই ছিঁড়ল না সোনালির। মাত্র ১৮ টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করতে বাকি রেখেছে বিজেপি। তার মধ্যে কি সোনালির স্থান হবে? সম্ভাবনা যে ক্ষীণ, তা বিলক্ষণ বুঝছেন তিনিও।
দ্বিতীয়জন সরলা মুর্মু, মালদহ জেলা পরিষদের সভাধিপতি। তৃণমূল তাঁকে হবিবপুর কেন্দ্রে ভোট ময়দানের সৈনিক করেছিল। কিন্তু সেই কেন্দ্র তাঁর না-পসন্দ। তিনি চেয়েছিলেন মালদহ কেন্দ্র। কিন্তু সরলা মুর্মুর পছন্দের আসন মালদহ তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত। অথচ তিনি তফসিলি উপজাতির প্রতিনিধি। ফলে বিজেপির তরফে প্রাথমিক সম্মতি থাকলেও ওই আসনে সরলার পক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা সম্ভব হল না। ফলে তড়িঘড়ি শিবির বদল করেও কোনো লাভের লাভ হল না সরলার। যদিও সরলার দাবি, প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছে নেই তাঁর। দলে অনেক সমস্যা ছিল, সেই কারণেই বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন তিনি।
অপর জন কলকাতা ময়দানের খ্যাতনামা ফুটবলার দীপেন্দু বিশ্বাস, বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্রের বিদায়ী বিধায়ক। কিন্তু একুশের ভোটে ঘাসফুল শিবির আর তাঁকে লড়াইয়ের সুযোগ দেয়নি। ক্ষুব্ধ দীপেন্দু জার্সি বদলে পদ্ম শিবিরে গিয়েছেন। তারপরও অবশ্য প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পাননি তিনি। একই পরিস্থিতি নদিয়া জেলা সভাপতি প্রবীণ গৌরীশংকর দত্তরও। তেহট্ট আসনে তৃণমূলের প্রার্থী হতে না পেরে বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। তবু কপালে প্রার্থী হওয়ার শিকে ছিঁড়ল না। গৌরীশংকরের সঙ্গে সমব্যথী অশীতিপর জটু লাহিড়ীও। শিবপুর কেন্দ্র থেকে দাঁড়াতে চেয়ে তিনি বিজেপিতে গিয়েছিলেন। তবে গেরুয়া শিবিরও তাঁকে ফিরিয়েছে। কোনও কেন্দ্রেই এখনও টিকিট পাননি তিনি।