দল বদলালেও এবারেও নন্দীগ্রাম থেকেই বিধানসভা ভোটে লড়ছেন তিনি। কিন্তু তাঁকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়ে এবার নন্দীগ্রাম কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এ হেন ‘প্রেস্টিজ ফাইটে’ নেমে এখন ক্রমাগত নিজেকে নন্দীগ্রামের ভূমিপুত্র বলে প্রচার শুরু করে দিয়েছেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। নন্দীগ্রামের বহু স্থানে এই পোস্টার পড়েছে যেখানে নিজেকে নন্দীগ্রামের ভূমিপুত্র বলে দাবী করেছেন শুভেন্দু। কিন্তু সাধারণ মানুষ অন্য কথা বলছে। হলদিয়া থেকে শুরু করে নন্দীগ্রামের মানুষ বলছেন তিনি কখনই সেখানকার ভূমিপুত্র নন।
ওয়েস্ট বেঙ্গল ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের কর্মী আহমদুল্লাহ খান শুভেন্দুর প্রতি ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে বলেন, ‘শুভেন্দু বেইমান, উনি মিরজাফর, উনি মিথ্যাবাদী। উনি নন্দীগ্রামের ভূমিপুত্রই নন। ওনার বাড়ি কাঁথিতে। উনি যখন প্রথমবার তমলুকে এমপি হয়েছিলেন তখন এখানে ভোট দিতে পারেননি, কারণ উনি এখানকার ছেলেই নয়। পরে উনি হলদিয়া পৌরসভায় নাম তুলেছিলেন। আর এবার নন্দীগ্রামে নাম তুলেছেন। এমন নাম তুলিয়ে নিজেকে ভূমিপুত্র প্রমান করা যেতেই পারে কিন্তু আসলে তিনি এখানকার ছেলেই নন।’ একইসঙ্গে তাঁর অভিযোগ, ‘শুভেন্দু অধিকারী এমপি থাকাকালীন হলদিয়ার সমস্ত কলকারখানার দায়িত্বে উনি ছিলেন। আমাদের মতো শ্রমিকদের শোষণ করে নিজে সেই টাকা আত্মসাৎ করে নিয়ে অন্য দলে চলে গিয়েছে।’
আবার হলদিয়ার ঝরনা দেবী বলেন , ‘শুভেন্দু অধিকারী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলছেন বহিরাগত। বাংলার মানুষ বাংলাতেই কীভাবে বহিরাগত হয়? সেই অনুযায়ী উনি নিজেও তো তাই। উনি তো কাঁথির ছেলে। আজ কীভাবে তিনি নন্দীগ্রামের ভূমিপুত্র হয়ে গেলেন। আমাদের দেশের আইন যে ব্যক্তি যে রাজ্যের ভোটার সেই রাজ্যের যে কোনও স্থানে তিনি ভোটে লড়াই করতে পারেন। এমনভাবে কাউকে বহিরাগত বলে দেওয়া যায় না। এটা কুৎসা করার চেষ্টা। এছাড়া আর কিছু নয়।’ নন্দীগ্রামের আরেক বাসিন্দা সোমা দেবীর কথায়, ‘নন্দীগ্রাম আন্দোলনের মাটি। সঠিক জবাব দিতে জানে। কে কোথাকার মানুষ , ক কী করছে না করছে সব বোঝে। শুভেন্দু অধিকারী সেই জবাব পেয়ে যাবে।’
উল্লেখ্য, প্রার্থী হওয়ার পর সম্প্রতি নন্দীগ্রামে একটি কর্মীসভা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে তিনি বলেন, ‘নন্দীগ্রামে আমি কেন দাঁড়ালাম? ভবানীপুর থেকেও তো দাঁড়াতে পারতাম। শেষবার যখন এসেছিলাম সেদিন কথা দিয়েছিলাম। আপনাদের উদ্দীপনা দেখে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সিঙ্গুর না হলে নন্দীগ্রামের আন্দোলনের তুফান আসত না। মাথায় ছিল হয় সিঙ্গুর বা নন্দীগ্রাম থেকে দাঁড়াব।’ বহিরাগত ইস্যুতে ওইদিন তিনি বলেছিলেন, ‘কেউ কেউ বলছে, আমি নাকি বহিরাগত। আমি বাংলার মেয়ে বহিরাগত হয়ে গেলাম? আর তুমি দিল্লির লোক, বহিরাগত হলে না? যাঁরা গুজরাত থেকে আসছেন, রাজস্থান থেকে আসছেন, তাঁরা বাংলার লোক হয়ে গেলেন? তোমার বাড়ি মেদিনীপুর, আর আমার বাড়ি বীরভূম, এটাই তো পার্থক্য’।