এই নাহলে ‘বীরপুরুষ’। ‘অপরাধ’ করতেই ৮০ বছরের বৃদ্ধ বাবাকে শাস্তি দিলেন গুণধর ছেলে। বাবার ‘অপরাধ’, তিনি নাকি লুকিয়ে সন্দেশ খেয়েছেন! তাও একটি গোটা সন্দেশ নয়, মাত্র অর্ধেক সন্দেশ। আর বাকি অর্ধেকটা দিয়েছিলেন বৃদ্ধা স্ত্রীকে।
এই সামান্য অপরাধেই ছেলের হাতে নির্মমভাবে মার খেতে হল ওই অসহায় বৃদ্ধ বাবাকে। মারধরের সেই নৃশংস ভিডিও তুলেছিলেন এক প্রতিবেশী। তারপর তা পোস্ট করে দেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। যা অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই ভাইরাল হয়ে যায়। তারই জেরে শেষ পর্যন্ত অভিযুক্ত ছেলেকে প্রথমে আটক করে পুলিশ। পরে লিখিত অভিযোগ দায়ের হলে তাকে গ্রেফতারও করা হয়।
বৃহস্পতিবার কুলাঙ্গার ছেলে প্রদীপ বিশ্বাসকে তোলা হয় বারাসত আদালতে। সেখানেই বাবার স্নেহ উপচে পড়ল ছেলের উপরে। আদালতে ছেলের জামিন চাইলেন খোদ বাবা। বললেন, একমাত্র ছেলে। ওকে ছাড়া চলবে না। এমনকি ছেলেকে জামিন না দিলে আত্মহত্যার হুমকিও দিলেন। পিতার এমন আর্তনাদের সাড়া দিলেন বিচারক। জামিনে মুক্তি পেলেন প্রদীপ বিশ্বাস।
বুধবার অশোকনগরের বিল্ডিং মোড় এলাকায় এহেন অমানবিক ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই বৃদ্ধের নাম মানিকলাল বিশ্বাস। তিনি এলাকার হাতুড়ে ডাক্তার। তাঁর স্ত্রী ডায়াবেটিসের রোগী। মিষ্টি খাওয়া বারণ। মানিকলালকে কেউ বিজয়ায় মিষ্টি খেতে দিয়েছিল। তিনি নিজে তাঁর অর্ধেকটা খেয়ে, বাকিটুকু দিয়েছিলেন স্ত্রীকে। এই ব্যাপারটি জানতে পেরেই মায়ের সুগার বেড়ে যাবে এই অজুহাতে নির্মম ভাবে বাবাকে মারতে থাকেন ছেলে প্রদীপ বিশ্বাস ।
সোশ্যাল মিডিয়ার ওই ভিডিওতে পরিষ্কার দেখা ও শোনা যাচ্ছে, বৃদ্ধ মানিকবাবু ছেলে প্রদীপের সামনে অসহায় হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। ছেলে খালি গায়ে সন্দেশ খাওয়া নিয়ে জবাব চাইছে। কখনও ডান হাতে বাবার গালে সজোরে থাপ্পড় মারছে। কখনও আবার বাবার জামার কলার ধরে বাঁ হাত দিয়ে মারছে। বৃদ্ধ বাবা ক্ষমাও চাইছেন। বলছেন ভুল হয়ে গেছে। ছেলে তখন মারতে মারতে বলছে, ‘অন্যায় হয়ে গিয়েছে তাই তো। তুমি আর কখনও করবে না? তাই তো?’ বাবা বলছেন, ‘না’।
ধৃত ছেলে অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভার ট্যাক্স কালেক্টর। পুলিশের কাছে তিনি দাবি করেছেন, মায়ের হাই ডায়াবেটিস। বাবা তাঁকে সন্দেশ দেওয়ায় তিনি মাথা ঠিক রাখতে পারেনি। তাই বাবার গায়ে হাত তুলে ফেলেছেন। তবে এলাকাবাসীর দাবি, এমন ঘটনা আগেও বহুবার ঘটেছে। এইরকম ‘গুণধর’ ছেলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন।