খোদ প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপেও সিবিআইয়ের ড্যামেজ কন্ট্রোল হল না। সামলানো গেল না দেশের প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই প্রধান এবং সংস্থার স্পেশাল ডিরেক্টরের দ্বৈরথ। দুর্নীতির অভিযোগে এফআইআর আগেই করা হয়েছিল এবার রাকেশ আস্থানাকে সাসপেন্ড করার সুপারিশ করল সিবিআই। আর এই সুপারিশ করেছেন খোদ সিবিআই প্রধান অলোক বর্মা।
এদিকে ‘গ্রেফতারির আশঙ্কা’ প্রকাশ করে মঙ্গলবার দিল্লি হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন রাকেশ আস্থানা। যার পরিপ্রেক্ষিতে এদিন দিল্লি হাইকোর্ট জানিয়েছে, আগামী সোমবার পর্যন্ত আস্থানাকে গ্রেফতার করা যাবে না। মামলার পরবর্তী শুনানি সেদিনই ধার্য হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গুজরাত ক্যাডারের আইপিএস অফিসার রাকেশ আস্থানা নরেন্দ্র মোদীর পছন্দের লোক বলেই পরিচিত। মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর গুজরাট থেকে দিল্লিতে নিয়ে আসা হয় আস্থানাকে। দায়িত্ব দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার অস্থায়ী ডিরেক্টরের পদ। পরে পদোন্নোতি করে দেওয়া হয় স্পেশাল ডিরেক্টরের পদ। মাস খানেক আগে সিবিআই ডিরেক্টর অলোক ভার্মার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশনে নালিশ ঠুকেছিলেন আস্থানা। সিবিআইয়ের অনেকের মতে, এজেন্সির শীর্ষ পদের দাবিদার হয়ে উঠতেই এই কাজ করেছিলেন আস্থানা। ভিজিল্যান্স কমিশনকে চিঠি লিখে সিবিআইয়ের তরফে বলা হয়, অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে এই অভিযোগ করা হয়েছে। তা ছাড়া এমন একজন এই অভিযোগ করেছেন যাঁর বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি দুর্নীতি মামলা রয়েছে। এরপরেই আস্থানার বিরুদ্ধে এফআইআর করে সিবিআই।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, গোটা বিষয়টি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। দেশের প্রধান গোয়েন্দা সংস্থার একেবারে শীর্ষ পদে এই নজিরবিহীন সংঘাতের জেরে বিবাদমান দুই সিবিআই কর্তাকে তলব করেছিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তারপর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখাও করে আসেন সিবিআই প্রধান অলোক বর্মা। সরকারি সূত্রে খবর, সেই বৈঠকে সিবিআই নিয়ে ভোটের আগে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে বলে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন মোদী। কিন্তু তারপরেও সিবিআই-এর পক্ষ থেকে কেন্দ্রের কাছে আস্থানাকে সাসপেন্ড করার সুপারিশ বিষয়টিকে অন্য মাত্রা দিল।
প্রধানমন্ত্রী দফতরের অধীন পার্সোনেল মন্ত্রকও আস্থানার বিরুদ্ধে এফআইআর করা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। তাদের মতে, এ ধরনের এফআইআর করতে হলে আগাম অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন হয়। কিন্তু তা নেওয়া হয়নি। তারপরেও সিবিই প্রধানের সাসপেণ্ড করার সুপারিশে বিরোধীদের অভিযোগ, শীতঘুমে গিয়েছে মোদী সরকার। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী টুইটে লেখেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর অধীনে সিবিআইকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে আসছে। এখন নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ করেই প্রতিষ্ঠানটি অন্তিম পতনের দিকে এগোচ্ছে’। কেন্দ্রের মোদী সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে সিবিআই, ইডি-র মতো এজেন্সিগুলিকে ব্যবহার করে আসছে বিরোধীদের করা এমন অভিযোগও মান্যতা পেল।
স্পেশাল ডিরেক্টর পদমর্যাদার অফিসার, যিনি ভবিষ্যতের সিবিআই প্রধান হতে চলেছিলেন তাঁর বিরুদ্ধেই ঘুষের অভিযোগ এমনকি সাসপেন্ডের সুপারিশে রীতিমতো চাপে মোদী সরকার। রাফাল নিয়ে আক্রমণের সঙ্গে ভোটের মুখে এই গৃহযুদ্ধ চিন্তা বাড়িয়ে চলেছে বিজেপির। দলের নেতারাই বলছেন, ‘রাহুর গ্রাস লেগেছে সিবিআইতে’।