একসঙ্গে একাধিক রেলের ঘোষণা করল রেল। আর তার ফলেই মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সাঁতরাগাছি স্টেশনে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হল ২ জনের। আহত কমপক্ষে ৩৫ জন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় আরও ৭ জন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। আহতদের মধ্যে রয়েছে দুই শিশু ও মহিলাও। সেই সময় বিসর্জনের কার্নিভাল চলছিল রেড রোডে। সেই সময়েই সাঁতরাগাছি স্টেশনের দুর্ঘটনার খবর আসে। এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে ঘটনাস্থলে চলে আসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ঘটনার পরেই রেলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন সাধারণ মানুষ। তাঁদের অভিযোগ, সাঁতরাগাছি স্টেশনে প্ল্যাটফর্ম একাধিক। কিন্তু, ফুটব্রিজ একটিই। যেকোনও প্ল্যাটফর্মে যেতে গেলে ওই একটি ফুটব্রিজই ব্যবহার করতে হয় যাত্রীদের। যাত্রীদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় ফুটব্রিজের উপর চাপ বাড়তে থাকে। সে কারণেই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গিয়েছে। দূরপাল্লার গাড়ি এলেই ওই ফুটব্রিজে চাপ বেড়ে যায়। দুর্ঘটনার পর যাত্রীদের অভিযোগ, একসঙ্গে দু’টি ট্রেন ঢুকলে একটি ফুটব্রিজ দিয়ে হাঁটা যায় না। এদিন সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা নাগাদ সাঁতরাগাছি-চেন্নাই এক্সপ্রেস এবং শালিমার-বিশাখাপত্তনম এক্সপ্রেস এসে দাঁড়ায় সাঁতরাগাছিতে। তিন ও পাঁচ নম্বর প্ল্যাটফর্মের উপর ফুটব্রিজে ঘটনাটি ঘটে। ওই সময় আর একটি ট্রেন চলে এসেছিল। স্থানীয় সূত্রে খবর, ওই সময় সাঁতরাগাছি-দিঘা ট্রেনও ঢুকে পড়েছিল। পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারত। যাত্রীদের অভিযোগ, ফুটব্রিজটি অত্যন্ত সরু। এক যাত্রী বলেন, এক নম্বর প্ল্যাটফর্মের উপর দিয়ে যখন উঠছি, তখন প্রচন্ড ভিড় শুরু হয়। সেই সময় দুই এবং তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মের উপরের ফুটব্রিটের সিড়িতে ঠেলাঠেলি শুরু হয়ে যায়। যাত্রীরা নিজেদের মধ্যেই হাতাহাতি করতে থাকে। সেই সময় যথেষ্ট রেল পুলিশ ছিল না বলে অভিযোগ ওই যাত্রীর।
ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মৃতদের পরিবারের জন্য ৫ লক্ষ এবং গুরতর আহতদের জন্য ১ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছেন তিনি। দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দু’জন মারা গিয়েছেন। এটা খবই দুর্ভাগ্যজনক। কোথাও একটা কো-অর্ডিনেশন গ্যাপ তৈরি হচ্ছে। পরপর বেশ কয়েক জায়গায় এমন ঘটনা ঘটল। লক্ষ লক্ষ মানুষ রোজ ট্রেনে যাতায়াত করেন। আমি নিজেও রেলমন্ত্রী ছিলাম। কাজ করে এসেছি। ওটা আমারও পরিবার। তাই বলছি, রেলকে আরও দায়িত্ববান হতে হবে’। তবে রাজ্য সরকারের তরফে একটি তদন্ত করে কী কারণে দুর্ঘটনা ঘটল তা খতিয়ে দেখা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি একটি টুইটেও মৃতদের উদ্দেশ্যে সমবেদনা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। লিখেছেন, ‘আবার একটা মর্মান্তিক দুর্ঘটনার কবলে পড়ল রেল। পুজোর সময় এমন একাধিক দুর্ঘটনা ঘটছে, যা খুবই দুঃখের। অমৃতসরেও ঘটল। আমাদের দেশের লাইফ্লাইন রেল। যাত্রী নিরাপত্তাই সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ’। এদিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ঘটনাস্থলে আসেন ফিরহাদ হাকিম, সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ এবং ডিজি বীরেন্দ্র।
কিন্তু কেন এমন ঘটল? স্থানীয় বাসিন্দা থেকে ট্রেন যাত্রীদের বক্তব্য, এদিন দুর্ঘটনা ঘটলেও এমনটা যে কোনও দিনই হতে পারে। এদিন স্টেশনে একই সময়ে ২ এবং ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মের আপ লাইনে ট্রেন ঢুকে পড়ে। একই সময়ে অন্য প্ল্যাটফর্মেও একটি ট্রেন ছিল। এছাড়া ফুট ওভার ব্রিজে আগে থেকেই বেশ কিছু যাত্রী হাঁটছিলেন। ফলে তিনটি ট্রেনের যাত্রীরা এক সঙ্গে ব্রিজে ওঠায় মারাত্মক ভিড় হয়ে যায়। সেই সময়ে এক যাত্রী হোঁচট খেয়ে ভিড়ের মধ্যে পড়ে গেলে তার উপর দিয়ে হুড়মুড়িয়ে আরও কয়েকজন যাত্রী গিয়ে পড়ে। ২০-২৫ জন গুরুতর জখম হন। তাদের হাওড়া জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানেই মৃত্যু হয়েছে দু’জনের।
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ বলেন, পুজোর জন্য যাত্রী সংখ্যা বেশি ছিল। তাই এমন দুর্ঘটনা। ট্রেনের সময় সংক্রান্ত কোনও গণ্ডগোল হয়েছিল কিনা, তা তদন্ত করে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। রেলের তরফ থেকে দুটি হেল্পলাইন নম্বর দেওয়া হয়েছে। সেগুলি হল – ০৩২২১০৭২ (খড়গপুর) ও ০৩৩২৬২৯৫৫৬১ (সাঁতরাগাছি)।