মমতা সরকারের প্রকল্প দুয়ারে সরকার-এর শেষ দিনে সকাল দশটায় ক্যাম্প শুরু হলেও, পাঁচ ঘণ্টা আগে থেকেই বিশাল লাইন দেখা গেল ভাঙড়ের শানপুকুর অঞ্চলের কাশীপুর গ্রামে। বেলা যতই বেড়েছে ততই বেড়েছে মানুষের ভিড়। দিনের শেষে আবেদনপত্র জমা দিয়ে অনেকের মুখেই যুদ্ধজয়ের হাসি। ভাঙড় ২ ব্লকের বিডিও কার্তিক চন্দ্র রায় বলেন, ‘গ্রামের মানুষ ভোর ভোর ঘুম থেকে ওঠেন। সরকারি প্রকল্পের সুবিধা নিতে অনেকেই শেষ রাতে লাইন দিয়েছেন।’
শানপুকুরের বাসিন্দা গীতা দাস বলেন, ‘আমাদের পাড়ার শ্যামলীর গলব্লাডার অপারেশন ফ্রিতে হয়েছে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকায়। এই কার্ড থাকলে গরিব মানুষের চিকিৎসার জন্য ভাবতে হবে না। তাই ভোরবেলা সব কাজ ফেলে মাঠে এসে লাইন দিয়েছি।’ কাশীপুরের বাসিন্দা রহিম মোল্লা বলেন, ‘একবেলা রিকশা না চালালে আমার খাওয়া হয় না। কিন্তু বাড়ির পাশে যখন সরকারের লোকজন আসছে আর সব ধরনের প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা পাওয়া যাবে তাই কাজে না গিয়ে দুটো পান্তাভাত খেয়ে ভোর থাকতেই ক্যাম্পে চলে এসেছি।’ রহিম জানান স্বাস্থ্যসাথী ছাড়াও জবকার্ড ও রেশন কার্ডের জন্য আবেদন করবেন তিনি।
শহর কলকাতা লাগোয়া ভাঙড় ২ ব্লক মূলত কৃষিপ্রধান এলাকা। তিন লক্ষের বেশি মানুষ এই ব্লকে বাস করলেও প্রয়োজনীয় নথিপত্র এবং যোগাযোগের অভাবে অনেকে সরকারি প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা ঠিকমতো নিতে পারেন না। লেখাপড়া জানা মানুষের সংখ্যা কম থাকায় অনেকেই সঠিক সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন। তাই দুয়ারে সরকারের সূচনা থেকে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রতিটি ক্যাম্পেই মানুষের ভিড় উপচে পড়েছে সুযোগ সুবিধা নেওয়ার জন্য।
ভাঙড় ২ ব্লক প্রশাসন সূত্রে খবর, ব্লকের ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় এ পর্যন্ত ৪২টি ক্যাম্প হয়েছে। সেখানে পঞ্চাশ হাজারের বেশি মানুষ ক্যাম্পে এসে বিভিন্ন প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা নিয়েছেন। দুয়ারে সরকার প্রকল্পের মাধ্যমে গত দেড় মাসে ৩২ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসাথীর জন্য আবেদন করেছেন। তার মধ্যে ১৩ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড পেয়ে গিয়েছেন। জাতি শংসাপত্রের জন্য ৪ হাজার আবেদনপত্রের মধ্যে ১৬২৫ জন শংসাপত্র হাতে পেয়েছেন। বার্ধক্য ভাতা, বিধবা ভাতা, রূপশ্রী সব মিলিয়ে এক হাজার মানুষ উপকার পেয়েছেন। ৭১৮ জন জবকার্ড এবং ১২২৫ জন কৃষকবন্ধু কার্ড পেয়েছেন। পাড়ায় সমাধানের মাধ্যমেও ৩২টি নতুন রাস্তা, নিকাশি নালা, কালভার্টের কাজ শুরু হয়েছে ভাঙড় ২ ব্লক জুড়ে।