দিনতিনেক আগেই পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোণা শহরে সভা করেছিলেন বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী। আজ সেখানে বিরাট সমাবেশ করল তৃণমূলও। এর সেই সভামঞ্চ থেকে চূড়ান্ত আক্রমণে প্রতিপক্ষকে রীতিমত ধুয়ে দিলেন তৃণমূল সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, দলের অন্যতম মুখপাত্র কুণাল ঘোষ এবং সুজাতা মণ্ডল খাঁ। পর্যবেক্ষকদের মতে, শুভেন্দুর সভায় যা লোক হয়েছিল মঙ্গলবারের তৃণমূলের সভা সে সবকিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে।
এদিনের সভায় দলে দলে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাঁসর, ঘন্টা, খোল-করতাল নিয়ে হাজির হয়েছিলেন। যা দেখে আপ্লুত বক্তারা আয়োজক অজিত মাইতিকে ধন্যবাদ না জানিয়ে পারেননি। এদিন সভার প্রথম থেকে শেষপর্যন্ত প্রসূন, সুজাতা এমনকি খোদ কুণাল ঘোষ যখনই বক্তব্য রাখতে গিয়েছেন, জনতা আওয়াজ তুলেছে ‘গদ্দার- মীরজাফরদের’ কথা শুনতে চাই। বিজেপিকে তুলোধোনা করেছেন বক্তারা, কটাক্ষ আর ঝাঁঝালো আক্রমণে ঝাঁঝরা করেছেন অধিকারী পরিবারের ‘মীরজাফর’-কে। আর হাততালিতে কাঁসর-ঘন্টা, ডিজে বাজিয়ে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েছে জনতা।
পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোণা টাউনে তৃণমূলের জনসভায় আজ বিকেলে তিল ধারণের জায়গাটুকুও ছিল না। প্রসূন, কুণাল সুজাতার পাশাপাশি ছিলেন অজিত মাইতি, শিউলি সাহা, ছায়া দলোই-সহ অন্যান্য নেতৃত্ব। বিরাট সমাবেশ, আবেগে ভরপুর। কলকাতায় বসে টিভি বা কাগজ দেখে বোঝা যাবে না তৃণমূলকর্মীদের এই ঐক্যবদ্ধ উন্মাদনা। এদিন নেত্রী মমতার ওপরই আস্থার কথা জানিয়েছেন সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, আমি মরার আগের দিন পর্যন্ত তৃণমূলের সঙ্গে আছি, থাকবো। বিজেপিকে হারিয়ে দিদিকে ফের মুখ্যমন্ত্রী দেখতে চাই। দিদি যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন ।
তিনি আরও বলেন, আমি বিজেপিতে যাচ্ছি বলে যে রটিয়েছিল, আমাকে সে চেনে না। আমি প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বেসুরো নই। আমি বরাবর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেই আছি। আমার নেত্রী মমতা। আমার দল তৃণমূল কংগ্রেস। দল আমায় হাওড়ায় তিনবার সাংসদ হিসেবে হ্যাট্রিক করিয়েছে। এটা আমার কাছে ভীষণ গর্বের। তৃণমূল কংগ্রেস বাংলাকে নতুন সম্মান দিয়েছে। যারা বড় বড় কথা বলছেন তারা এতদিন কোথায় ছিলেন?
পাশাপাশি এদিনের বক্তৃতায় ফের সামনে এল ফুটবলার প্রসূনের বক্তব্য। তিনি বললেন, এবারের নির্বাচনে আমরা ফুটবল খেলবো বিজেপির সঙ্গে। বলে বলে ১০০ গোল দেব বিজেপিকে। এছাড়াও তিনি বলেন, বাংলা জুড়ে বিজেপি যেই আগুন জ্বালাচ্ছে, এবার দাউ দাউ করে সেই আগুনেই বিজেপি পুড়ে ছাই হয়ে যাবে।
অন্যদিকে সুজাতা খাঁ বিজেপিকে বিঁধলেন তীব্র আক্রমণে। এতদিন বিজেপি করে আসা সুজাতা ব্যাখ্যা করেন কেন বিজেপি খারাপ। শুভেন্দুকে ইঙ্গিত করে সুজাতা হুঁশিয়ারি দেন, রাজনীতি ছাড়ার জন্য তৈরি থাকো। বিশেষ করে মা-বোনদের কেন সাবধানে থাকতে হবে তার ব্যাখ্যাও তিনি করেন।
প্রসূন-সুজাতার পাশাপাশি দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ এদিন কেন্দ্রের নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। বলেন, রাজ্য রাজনীতির প্রেক্ষিতে বিজেপি কোনওভাবেই ক্ষমতায় আসবে না। সাধারণ মানুষের ভোটে জিতে ফের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই মুখ্যমন্ত্রী হবেন। সবমিলিয়ে আজ চন্দ্রকোণা টাউনের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ততাই প্রমাণ করে দিল যে, তাঁরা কোনো গদ্দারকে নয়, আস্থা রাখছেন তাঁদের বহু যুদ্ধের সেনাপতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরেই।