প্রয়াত বাংলা ব্যান্ড সঙ্গীতের কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী আইয়ুব বাচ্চু। ১৮ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ ঢাকার মগবাজারে নিজের বাড়িতে হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। ৯টা নাগাদ অচৈতন্য অবস্থায় ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়। ৯টা ৫৫ মিনিট নাগাদ চিকিত্সকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬০ বছর।
আইয়ুব বাচ্চুকে এই উপমহাদেশের ‘সেরা গিটারিস্ট’ বললে অত্যুক্তি করা হবে না বোধহয়। মূলত গিটারের প্রতি অসামান্য প্রেম আর অসম্ভব দখলই তাঁকে রক সঙ্গীতের জগতে টেনে নিয়ে আসে। ১৯৫৮ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম হয় আইয়ুব বাচ্চুর। সঙ্গীত জগতে তার যাত্রা শুরু হয় ‘ফিলিংস’-ব্যান্ডের মাধ্যমে ১৯৭৮ সালে। ১৯৯৫-এ আইয়ুব বাচ্চুর তৃতীয় একক অ্যালবাম ‘কষ্ট’ প্রকাশিত হয়। এটিকে তাঁর সর্বকালের সেরা একক অ্যালবাম হিসেবে মনে করা হয়। এ বছরেই এলআরবি-র চতুর্থ অ্যালবাম ‘ঘুমন্ত শহরে’ প্রকাশিত হয়। এটিও ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছিল। বাংলাদেশের ছবি ‘লুটতরাজ’-এ আইয়ুব বাচ্চুর গাওয়া ‘অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে’ ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। এটি ছিল তাঁর গাওয়া প্রথম চলচ্চিত্রের গান।
১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত আইয়ুব বাচ্চু যুক্ত ছিলেন ‘সোলস’ ব্যান্ডের সঙ্গে। এই সময়, ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম একক অ্যালবাম ‘রক্তগোলাপ’। ‘রক্তগোলাপ’ তেমন সাফল্য না পেলেও ১৯৮৮ সালে তাঁর দ্বিতীয় একক অ্যালবাম ‘ময়না’ সাড়া ফেলে দেয় বাংলা আধুনিক গানের দুনিয়ায়। ১৯৯১ সালে আইয়ুব বাচ্চুর হাত ধরেই জন্ম হয় বাংলা ব্যান্ড এলআরবি-র (লাভ রানস ব্লাইন্ড)। ব্যান্ড তৈরির পর এলআরবি-র প্রথম অ্যালবাম প্রকাশিত হয় ১৯৯২ সালে। এই অ্যালবামের ‘ঘুম ভাঙা শহরে’, ‘শেষ চিঠি কেন এমন চিঠি’, ‘হকার’ গানগুলি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। ১৯৯৩ ও ১৯৯৪ সালে এলআরবি-র দ্বিতীয় ও তৃতীয় ব্যান্ড অ্যালবাম ‘সুখ’ ও ‘তবুও’ প্রকাশিত হয়। ততদিনে বাংলা রক ব্যান্ড হিসেবে এলআরবি বেশ বিখ্যাত হয়ে গিয়েছে।
২০০৯ সালে তার চতুর্থ একক অ্যালবাম ‘বলিনি কখনও’ প্রকাশিত হয়। এর ছ’বছর পর, ২০১৫-এ তাঁর পঞ্চম একক অ্যালবাম ‘জীবনের গল্প’ মুক্তি পায়। বাংলা ব্যান্ড এলআরবি-র (লাভ রানস ব্লাইন্ড) লিড গিটারিস্ট ও ভোকাল আইয়ুব বাচ্চু ছিলেন একাধারে গায়ক, গীতিকার ও সুরকার। অত্যন্ত গুণী এই শিল্পী তার শ্রোতা-ভক্তদের কাছে এবি (AB) নামেও পরিচিত। তার গাওয়া সবচেয়ে জনপ্রিয় গানগুলির মধ্যে, ‘সেই তুমি কেন এত অচেনা হলে’, ‘রূপালি গিটার’, ‘কষ্ট পেতে ভালোবাসি’, ‘ঘুম ভাঙ্গা শহরে’, ‘অবাক হৃদয়’, ‘আমিও মানুষ’, ‘কষ্ট কাকে বলে’, ‘মন চাইলে মন পাবে’ ইত্যাদি বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
কিংবদন্তি এই সঙ্গীতশিল্পীর মৃত্যুতে গভীর শোক জ্ঞাপন করেছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মহম্মদ আবদুল হামিদ। আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুতে বাংলার রক সঙ্গীতের অপূরণীয় শূন্যস্থানের সৃষ্টি হল।
