অতি সম্প্রতি বাংলায় অল ইন্ডিয়া মজলিস–ই–ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের (মিম) প্রধান তথা সাংসদ আসাউদ্দিন ওয়েইসির সফর করেছেন। বিহারের পাশাপাশি বাংলাতেও অনেকগুলি আসনে প্রার্থী দেবার পরিকল্পনা করছে মিম। এদিন তাদের বিরুদ্ধে পাল্টা হুংকার ছাড়ল তৃণমূল কংগ্রেস। মিমকে তীব্র আক্রমণ ও কটাক্ষ করলেন জমিয়তে-উলেমায়ে হিন্দের রাজ্য সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী ও রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।
উল্লেখ্য, রাজ্যের সংখ্যালঘু ভোটে থাবা বসাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন মিম প্রধান। বিহারের পর এই রাজ্যে মুসলিম ভোট করায়ত্ত করতে তিনি এবার খেললেন ফুরফুরা শরিফের কার্ড। রবিবার ফুরফুরার পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকির সঙ্গে বৈঠক করে তিনি জানিয়ে দেন, সিদ্দিকিকে সামনে রেখেই এ রাজ্যে ভোটে লড়বে মিম। তাৎপর্যপূর্ণ হল, রাজ্য সরকারের অন্যতম সমালোচক হিসেবেই পরিচিত আব্বাস সিদ্দিকি।
রবিবার সিউড়ির ইদগাহ মাঠে গণবিক্ষোভ সভা করে জমিয়তে উলেমায়ে হিন্দ। সেখানে মূল বক্তা ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী। এদিন কেন্দ্রীয় সরকার এবং মিমকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন তিনি। জানান, ‘আজকের দিনটি বড় দুঃখের। কারণ হায়দ্রাবাদ থেকে মিম নামে একটি পাখি উড়ে এসেছে। এটাও একটা বিষ মাখা খাবার। বাংলার জন্য আমরাই যথেষ্ট। হায়দ্রাবাদের মৌলবির দরকার নেই। দিদিকে বিরক্ত করতে বিজেপির দালালি করতে মিমের আবির্ভাব হচ্ছে।’ মিমের সেই উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও মুর্শিদাবাদ জেলায় কুলিতে এক জনসভায় বলেন, ‘মিম মূলত বিজেপির বি টিম। মিমকে ভোট দিয়ে বিজেপি’র সুবিধা করে দেবেন না।’
প্রসঙ্গত, নভেম্বর মাসের ২৫ তারিখে সিউড়িতে বিজেপির সভা মঞ্চ থেকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অনেকের হাতে গেরুয়া পতাকা তুলে দেন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। বিজেপির সংখ্যালঘুর মোর্চার নেতা শেখ সামাদের মেয়েকে মঞ্চে ডেকে নেন এবং তাঁদের ফুল দিয়ে সংবর্ধনা দেন দিলীপ ঘোষ। সামাদ দীর্ঘদিন ধরে জেলবন্দি। বিহারে নির্বাচনের পরই এ রাজ্যের সংখ্যালঘু প্রভাবিত জেলাগুলিতে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করেছে মিম। বিহারে সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কে ভাগ বসিয়ে নীতীশ কুমার ও বিজেপির ক্ষমতা দখলের পথ মসৃণ করে দিয়েছিল ওয়াইসির মিম। পশ্চিমবঙ্গেও একই ফর্মুলায় এগোতে চাইছে বলে তারা, এমনটাই ইঙ্গিত দিচ্ছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞেরা।
এদিন জনসভায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অনেকের হালে বিজেপিতে যোগদানের প্রসঙ্গে করে সিদ্দিকুল্লা জানান, ‘অনেক মুসলিম নমাজ পড়ছেন, বিজেপি করছেন। আমি অনুরোধ করব বিষ খাবেন না। আমার ভুল হলে আমায় বলুন। অনুব্রতর ভুল হলে তাঁকে বলুন। কৃষিমন্ত্রীর ভুল হলে বলুন। কিন্তু বিষ খাবেন না।’ তবে রবিবারের বৈঠক নিয়ে খোদ ফুরফুরা শরিফ থেকেই সতর্কবার্তার সঙ্গে শোনা গিয়েছে হুঁশিয়ারিও। ফুরফুরার পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকি বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক শক্তি বাংলায় জায়গা পাবে না। যাঁরা পিছন থেকে মদত দিচ্ছেন, তাঁরাও সফল হবেন না। ২০২১ সালে বাংলার সংখ্যালঘু মানুষ সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধেই ভোট দেবেন।’