অমিত শাহের র্যালির পাল্টা দিয়ে গত মঙ্গলবার দুপুরে বোলপুর শহরের বুকে হয়ে গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদযাত্রা ও সভা। শাহ যার বাড়িতে গিয়ে ভুরিভোজ সেরে এসেছিলেন সেই বাসুদেব দাস বাউল পদযাত্রা শেষে বাংলার অগ্নিকন্যার পাশে দাঁড়িয়েই সুর তুলে দিয়েছেন, ‘তোমায় হৃদ মাঝারে রাখিব ছেড়ে দিব না।’ তারপর কেটে গিয়েছে ২ দিন। অথচ গেরুয়া শিবিরের কোনও নেতাকেই এই পদযাত্রা ও মুখ্যমন্ত্রীর সভা নিয়ে সেভাবে মুখ খুলতে দেখা যায়নি। অনুপম হাজরার মতো দু’-একজন যাও বা মুখ একটু খুলেছিলেন সেগুলিও কার্যত মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণে ব্যর্থ হয়েছে। কার্যত গেরুয়া শিবিরের এই মুখে কুলুপ আঁটা দেখে মনে হচ্ছে বীরভূমের মাটিতে তাঁরা তৃণমূলের কাছে হার স্বীকার করেই নিয়েছে। তাই মুখ্যমন্ত্রীর মিছিল ও সভা নিয়ে একেবারে নিশ্চুপ। এমনকি বিশ্বভারতীর অন্দরে তৃণমূলের পতাকা লাগানো বা জমায়েত হওয়া নিয়েও কোনও টুঁ শব্দটি শুনতে পাওয়া যাচ্ছে না। আর এখানেই প্রশ্ন উঠছে হঠাৎ করে এই নীরবতা কেন?
চলতি মাসে বোলপুরের বুকে অমিত শাহের র্যালির পর বঙ্গ বিজেপি নেতাদের অনেকে ভেবেই নিয়েছিলেন এবার রবিতীর্থে বইবে গেরুয়া ঝড়। কিন্তু তাঁদের সেই ভুল ভাঙতে বেশি সময় লাগেনি। কারণ ‘শাহী র্যালি’র শেষে রাজনীতির হিসাবে লাভক্ষতির থেকেও বেশি প্রশ্ন উঠেছে বহিরাগত বাহুবলীদের নিয়ে। উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা ছাড়াও আসানসোল, দুর্গাপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে শয়ে শয়ে লোক এনে মিছিল করতে হয়েছে বিজেপিকে। আর এইসব বহিরাগত, হিন্দিভাষী, বাহুবলীদের মোটেও ভালো ভাবে নেয়নি বোলপুরবাসী, শান্তিনিকেতনবাসী। বরঞ্চ রবির শহরে জয় শ্রীরাম ধ্বনি শুনে তাঁরা ভয়ই পেয়েছেন। আর সেই ভয়ই বোলপুরবাসীকে রাতারাতি বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে গেরুয়া শিবির থেকে। তাই মিছিলের রেশও গিয়েছে হারিয়ে। ঠিক সেই মুহুর্তে বাংলার সংস্কৃতি, বাঙালি আবেগ আর রবীন্দ্রনাথকে হাতিয়ার করে মমতা নেমে পড়েন লালমাটির পথে। নিজে পিছিয়ে থেকে এগিয়ে দেন কবিগুরুকে, বাংলার বাউলদেরকে।
শাহর র্যালিতে বিজেপি গায়ের জোরে ভিন্ন রাজ্যের সংস্কৃতি চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল৷ মমতার মিছিলে বাংলার সংস্কৃতিকে আঁকড়ে ধরে বোলপুরবাসী সেই ভিন্ন রাজ্যের সংস্কৃতি জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে গর্জে উঠল। মমতার পদযাত্রা বোলপুরবাসীকে দিয়েছে প্রতিবাদের ভাষা। তাই হাজার ছাড়িয়ে বোলপুর ভেসেছে লাখো মানুষের স্রোতে। বোলপুর ভেসেছে তাঁর চিরন্তন বাউলের সুরে, রবির গানে আর বাঙালির আবেগে। মমতা দেখিয়ে দিয়েছেন জনপ্রিয়তার নিরিখে এখনও বাংলার বুকে তাঁর ধারে কাছে কেউ নেই। তাই তো তাঁকে চোখের দেখা দেখতে, তাঁর একটু ছোঁয়া পেতে, তাঁর সঙ্গে একটু কথা বলতে গোটা বোলপুর নেমে পড়েছিল পথে। আট থেকে আশি— সকলেই হাজির হয়েছিল রাস্তার দু’পাশে। এই আবেগের স্রোত দেখা যায়নি শাহের র্যালিতে। আর এখানেই বিজেপিকে বলে বলে দশ গোল দিয়েছেন মমতা। এর যোগ্য জবাব না পেয়েই কার্যত মুখে কুলুপ এঁটেছে বিজেপি।