নোবেলজয়ী অর্থনীতিক অমর্ত্য সেনের শান্তিনিকেতনের বাড়ি ‘প্রতীচী’র জমির খানিকটা অংশ বিশ্বভারতীর। এমনই অভিযোগ তুলে সম্প্রতি বিতর্কে জড়িয়েছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ অমর্ত্য সেন নাকি পাল্টা বিশ্বভারতীর উপাচার্যকে চিঠি লিখে নিজের বক্তব্য জানিয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে জমিদখলের মতো অভিযোগ ওঠায় এবার বিশ্বভারতীর বিরুদ্ধে ক্ষোভপ্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বৃহস্পতিবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক এ নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে, মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘অমর্ত্য সেন কেন বিশ্বভারতীর জমি দখল করতে যাবেন? আসলে উনি আদর্শগতভাবে বিজেপি বিরোধী বলে ওঁকে নিয়ে এই চক্রান্ত।’
আসলে বিশ্বভারতীয় এই জমি সমস্যা দীর্ঘদিনের। সমস্যা খানিকটা জটিলও। মাস কয়েক আগে পৌষমেলার মাঠে পাঁচিল তোলা নিয়ে বিতর্ক শুরু হওয়ার পর নিজেদের জমি নিজেদের দখলে আনতে তৎপর হয়েছে বিশ্বভারতীয়। কিন্তু দেখা গিয়েছে, পূর্বপল্লী, দক্ষিণপল্লী, আশ্রম এলাকায় ৭৭টি প্লটের মধ্যে ১২টি প্লট মাত্র বিশ্বভারতীর নামে রেজিস্টার্ড রয়েছে। বাকীগুলি বিশ্বভারতীর নামে নেই। ১৯৩১-৩২ এবং ১৯৩৩ সালে পূর্বপল্লী, দক্ষিণপল্লীর প্লটগুলি সেসময় বিশ্বভারতীতে কর্মরত অধ্যাপক, কর্মীদের ৯৯ বছরের লিজ দেওয়া হয়েছিল। তারপর থেকে এসব প্লটে সেই অধ্যাপক, কর্মীদের পরিবারের সদস্যরা বসবাস করছেন। নিয়ম অনুসারে, ২০-২৫ বছর পর রেকর্ড কার নাম রয়েছে, তা খতিয়ে দেখে ভূমি দপ্তর। এক্ষেত্রে প্লটগুলি বিশ্বভারতীর হলেও কর্তৃপক্ষ নিজেদের নামে রেজিস্ট্রেশন করায়নি। ফলে ওই প্লটে বসবাসকারীদের নামেই তা রেকর্ড হয়ে গিয়েছে। সেভাবেই জটিলতা দেখা গিয়েছে অমর্ত্য সেনের ‘প্রতীচী’ বাড়ি নিয়েও।
কিন্তু এ বিষয়ে নোবেলজয়ী নিজেও বিশ্বভারতীর ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন। বিশ্বভারতীর উপাচার্যের চিঠি আদানপ্রদান নিয়ে তিনি সাফ জানিয়ে দেন যে এ বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কোনও কথা হয়নি। এ নিয়ে এদিন সাংবাদিক বৈঠকে ক্ষোভপ্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী। এই বিষয়টিকে রাজনৈতিক ইস্যু বলেই মনে করেন তিনি। তাই তাঁর মত, ‘অমর্ত্য সেন নিজে আদর্শগতভাবে বিজেপি বিরোধী। তাই তাঁকে নিয়ে এমন চক্রান্ত চলছে। তবে জেনে রাখবেন, অমর্ত্য সেনকে অপমান মানে বাংলাকে অপমান। আমরা কিছুতেই মেনে নেব না। অমর্ত্য সেনের মতো বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্বকে নিয়ে এমন চক্রান্ত নিন্দনীয়।’ এদিন বিশ্বভারতীর শতবর্ষে মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো নিয়েও সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন তিনি। অভিযোগ, তাঁকে কোনও আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।