বউবাজার থানার পিছনে ছোট্ট একফালি গলি। হেঁটে গেলে একের পর এক তিনতলা-চারতলা বাড়ি। সেখানেই সব মিলিয়ে ১৩২টি পরিবারের বসবাস, যার মধ্যে ৮০ শতাংশ অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অদ্ভুত ছোঁয়াচে মিশেল বুকে দাঁড়িয়ে আছে কলকাতার একমাত্র অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান কলোনি, বো ব্যারাক।
প্রতিবছর বড়দিনে শহরের আমোদপ্রেমীদের অন্যতম ‘ডেস্টিনেশন’ হয়ে ওঠে এই কলোনি। ক্রিসমাস ট্রি, সান্তাক্লজ, রং-বেরঙের বেলুন, তারা, আলোর মালায় ঝলমল করে চতুর্দিক। সেই সঙ্গে ভিনদেশি গানের সুর। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বছরের এই দিনে এই পাড়ার প্রবাসীরা ফিরে আসেন ঘরে। সকলকে নিয়েই নিজেদের মত করে বড়দিন উদযাপনে মেতে ওঠে বো ব্যারাকের বাসিন্দারা। কিন্তু এবার পরিস্থিতি কিছুটা আলাদা।
করোনা অতিমারীর প্রভাবে এবার অনেকেই বিদেশ থেকে ফিরতে পারেননি বাড়িতে। দীর্ঘ লকডাউনের ফলে ভাটা পড়েছে যোগাযোগে। তাই এবছর অনেকটাই শুনশান বো ব্যারাক। বড়দিনের বাঁধাধরা জমকালো ‘সেলিব্রেশন’ করবেন না বাসিন্দারা। একরাশ মন খারাপ নিয়ে চলতি বছরের বড়দিন কাটাবেন তাঁরা। মন ভালো না থাকায় এবার আর সেভাবে উদযাপনের কোনো পরিকল্পনা তাঁরা করেননি। বাড়িতে কেক কাটা হয়তো হতে পারে, তার বেশি কিছু নয়। তেমনটাই জানিয়েছেন তাঁরা।
বো ব্যারাকের বাসিন্দা ফেলিক্স অগাস্টিন বলেন, প্রথম দিকে তাও কিছু ভাবনা-চিন্তা ছিল। এখন সব বাতিল করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি পরিবারে বয়স্করা করোনায় ভুগেছেন। বাইরে থেকে পরিবারের লোকেরাও আসতে পারেননি। এমন পরিস্থিতিতে কী করে আনন্দ উৎসব সম্ভব ? এবছর সব উৎসব অনুষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা।
মন ভালো নেই এ পাড়ার বিখ্যাত মেরি অ্যান আন্টির। তাঁর তৈরি করা কেক আর ওয়াইনে টানে এই সময়টায় বো পাড়ায় ভিড় জমায় শ’য়ে শ’য়ে লোকজন। মেরি আন দরাজ গলায় সকলকে আহ্বান জানান। কেকের গন্ধে ভরে ওঠে তাঁর বাড়ির আশপাশ। এবার সেই ব্যবসাও ক্ষতির মুখে। “আসলে ক্ষতিটা ব্যবসার নয়, আমি তো পুরোদস্তুর চাকরি করি। আসলে এত লোকজন আসেন, পরিবারটাই যেন বড় হয়ে যায়। সেটাই সারাবছরের সঞ্চয় হয়ে যায়। চেনা মুখগুলি দেখতে এক বছর ধরে অপেক্ষা করে থাকি।” মনমরা মুখ নিয়ে জানালেন মেরি।
মন ভারাক্রান্ত। বছরের একটা দিনের উৎসবে ইতি টানল অতিমরী আবহ। পরের বছরের জন্য নিজেদেরকে তৈরি করছে বো ব্যারাক। আগামী বছর উৎসবমুখর হয়ে উঠবে এই কলোনি, সেই অপেক্ষাতেই দিন গুনছে বো ব্যারাকসহ পুরো কলকাতা।