বিরোধীদের সমালোচনার মুখে পড়ে বছরের গোড়াতেই কেন্দ্র সাফ জানিয়ে দিয়েছিল যে আইনে ‘লাভ জেহাদ’-এর কোনও অস্তিত্ব নেই। কিন্তু তার পরেও বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি লাভ জেহাদ-এর বিরুদ্ধে আইন আনতে উঠেপড়ে লেগেছে। ইতিমধ্যে উত্তরপ্রদেশের যোগী সরকার সেই আইন প্রণয়নও করে দিয়েছে। আর আইন চালু হওয়ার পর মোট পাঁচটি ঘটনায় বিয়ে রুখতে উদ্যোগী হয়েছে যোগীর পুলিশ। কিন্তু একই ধরনের দুটি ঘটনায় দুই মেরুর আচরণে পুলিশের নিরপেক্ষতা নিয়েই উঠে গেল প্রশ্ন।
শনিবার বরেলিতে হিন্দু যুবকের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে নিয়ে নালিশ জানাতে এসেছিলেন মেয়েটির বাবা। পুলিশ তাতে কর্ণপাত করেনি কারণ তাদের দাবি, বিয়ে হয়েছে সেপ্টেম্বরে অর্থাৎ আইন চালু হওয়ার অনেক আগে। এদিকে মোরাদাবাদে এক মুসলিম যুবককে জেলের ঘানি টানানো হচ্ছে, যদিও তাঁর স্ত্রীর দাবি, তাঁদের বিয়ে হয়েছে জুলাই মাসে। এই ঘটনায় মুসলিম যুবকের ভাইটিকেও জেলে পোরা হয়েছে বলে খবর। বরেলির ঘটনায় স্ত্রীকে ফের স্বামীর হাতেই তুলে দিয়েছে পুলিশ। অন্যদিকে, মোরাদাবাদের ক্ষেত্রে স্ত্রীকে রাজ্য সুরক্ষালয়ে পাঠানো হয়েছে।
শনিবার বরেলির প্রেমনগর থানায় শাহিদ মিয়া নামক এক ব্যক্তি অভিযোগ জানান যে তাঁর মেয়ে আলিশাকে (২২) তিনজন অপহরণ করেছে। যে সংস্থায় আলিশা কাজ করছিলেন, তাঁর মালিক মনোজকুমার সাক্সেনা, তাঁর বোন চঞ্চল সাক্সেনা এবং আলিশাকে যিনি বিয়ে করেছেন সেই সিদ্ধার্থ ওরফে অমন সাক্সেনার (২৪) বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেন শাহিদ। তিনি জানান, ১ ডিসেম্বর সংস্থায় প্রাপ্য টাকা আনতে বেরিয়ে আর ফেরেননি আলিশা। ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে দেখা যায় তা বন্ধ। এরপর সংস্থার মালিক মনোজের কাছে হাজির হলে তিনি কিছুই বলেননি।
শাহিদের দাবি, অনেকদিন ধরে আলিশাকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিলেন অমন, তাই বাধ্য হয়ে চাকরি ছেড়ে দেন আলিশা। প্রেমনগর থানার স্টেশন হাউস অফিসার অবিনাশ কুমার জানান, এফআইআর দায়ের হওয়ার পর আলিশা নিজে থানায় এসে জানান, তিনি সাবালিকা এবং অপহরণের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, তিনি স্বেচ্ছায় এই বিয়ে করেছেন। এরপর জেলাশাসকের সামনেও একই বয়ান দেন আলিশা। পুলিশ জানিয়েছে নতুন আইন এ ক্ষেত্রে প্রয়োগ না করার কারণ অভিযোগ পত্রে পাত্রীর বাবা ধর্ম-পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করেননি। শাহিদ মিয়ার দাবি, ধর্ম না বদলে তো বিয়ে করা যায় না। কিন্তু পুলিশ তাঁর কথা কানে তোলেনি।
আবার মোরাদাবাদের ঘটনায় কিন্তু পুলিশের ভূমিকা ১৮০ ডিগ্রি উলটো। রবিবার কাঁথ এলাকায় পিঙ্কিকে নিয়ে বিয়ের রেজিস্ট্রি করতে যাচ্ছিলেন রশিদ আলি (দুজনেরই বয়স ২২)। সঙ্গে ছিলেন রশিদের দাদা সেলিম আলি (২৫)। পুলিশ সেলিম এবং রশিদকে গ্রেফতার করে নেয়। বিজনোরের বাসিন্দা পিঙ্কির পরিবারের অভিযোগ, রশিদ তাঁদের মেয়েকে বিয়ে করে ‘জোর করে’ ধর্ম-পরিবর্তন করিয়েছে। পিঙ্কির দাবি, তাঁদের বিয়ে হয়েছে ২৪ জুলাই। সেই থেকেই তিনি মোরাদাবাদের কাঁথে আছেন। এও জানিয়েছেন, তিনি প্রাপ্তবয়স্ক এবং নিজের ইচ্ছেতেই এই বিয়ে হয়েছিল।