কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষি আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের রেশ ছড়িয়ে পড়েছে পুরো দেশে। আজ ভারতব্যাপী বনধ ডেকেছে কৃষক সংগঠনগুলি। তার মধ্যেই প্রাণ গেল দুই আন্দোলনকারী কৃষকের।
সোমবার ভোররাতে দিল্লি-হরিয়ানার সংযোগস্থল টিকরি সীমানায় পঞ্জাবের এক কৃষকের মৃত্যু হয়। মঙ্গলবার সকালে ওই একই এলাকা থেকে আরও এক কৃষকের দেহ উদ্ধার হয়। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রথম জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। প্রচণ্ড ঠান্ডায় একটানা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ফলে দ্বিতীয় জনের মৃত্যু হয়েছে, প্রাথমিক তদন্তের পর এমনই ধারণা পুলিশের। উল্লেখ্য, গত বুধবার এই টিকরি সীমানাতেই ৬০ বছর বয়সি এক কৃষকের মৃত্যু হয়। তার আগে ১লা ডিসেম্বর বিক্ষোভ থেকে ফেরার পথে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় বলজিন্দর সিংহ নামের আর এক কৃষকের।
মৃতদের মধ্যে প্রথম জনকে ৪৮ বছরের মেওয়া সিংহ বলে শনাক্ত করা গিয়েছে। পঞ্জাবের মোগা জেলার খোটে গ্রামের বাসিন্দা তিনি। গত ২৬ নভেম্বর টিকরি সীমানায় আন্দোলনে যোগ দেন তিনি। হাজার হাজার কৃষকের সঙ্গে পুলিশের জলকামান এবং কাঁদানে গ্যাসের মোকাবিলা করে এত দিন আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। সোমবার রাতে আচমকাই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। গ্রামের বাড়িতে ইতিমধ্যেই মেওয়ার মৃত্যুর খবর পৌঁছেছে।
সহযোদ্ধার মৃত্যু বুকে নিয়েই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন বাকি কৃষকরা। তা নিয়ে শোকপালনের সময়টুকুও পাননি তাঁরা।
অন্যজন ৩২ বছরের অজয় মুর। আদতে হরিয়ানার সোনিপতের বাসিন্দা অজয় গত কয়েক দিন ধরেই সেখানে অবস্থান বিক্ষোভের অংশ ছিলেন। রাতে স্থানীয় একটি পার্কে শুতেন তিনি। এ দিন সকালে সেখানে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় তাঁকে। অজয় গত ১২ দিন ধরে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন। মৃত কৃষকের পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, এক একর জমির মালিক ছিলেন অজয়। তাছাড়া আরও বেশ কিছু জমি লিজে নিয়ে চাষাবাদ করে কোনওক্রমে সংসার চালাতেন। ফলে নিজের অস্তিত্ব বাঁচাতে, অধিকার বাঁচাতে আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন। গত ১২ দিন ধরে অপেক্ষায় ছিলেন, আন্দোলনে জয় আসবে। ফের কিন্তু সেই জয় আসার আগেই মৃত্যু কেড়ে নিল অজয়কে।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছোয় হরিয়ানা পুলিশের একটি দল। অজয়ের দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। তবে প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, প্রচণ্ড ঠান্ডার জন্যই মৃত্যু হয়েছে অজয়ের।
কৃষি আইনের প্রতিবাদে গত ১২ দিন ধরে রাজধানী দিল্লির উপকণ্ঠে সিঙ্ঘু সীমান্তে অবস্থান-বিক্ষোভ আন্দোলন করছেন ৬ রাজ্যের কৃষকরা। ওই আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন অজয়ও। টিডিআই সিটির সামনে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে টানা ১২ দিন ধরে ধর্নায় বসেছিলেন। সোমবার রাতে খাওয়া-দাওয়া করে শুতে যান তিনি। এদিন সকালে তাঁর সাড়াশব্দ না পেয়ে কিছুটা ঘাবড়ে যান পরিবারের সদস্যরা। চিকিৎসকদের খবর পাঠানো হয়। চিকিৎসকেরা এসে তাঁকে পরীক্ষা করে মৃত বলে ঘোষণা করেন। অতিরিক্ত ঠাণ্ডার কারণেই অজয়ের মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘিরে আন্দোলনকারী কৃষকদের মধ্যে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। প্রায় দু’সপ্তাহব্যাপী এই আন্দোলনে এখনও পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ৯ জন কৃষক প্রাণ হারিয়েছেন।