পুজোর মুখে বৃষ্টির ভ্রূকুটি থাকবে জেনে চিন্তায় পড়েছিল রাজ্যবাসী। এখনও কাটেনি সেই দুশ্চিন্তা।
বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপের জেরে পুজোর ঠিক মুখে কয়েকদিন কলকাতা সহ গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপকূল সংলগ্ন কিছু এলাকায় হালকা বৃষ্টির পূর্বাভাস আগেই দিয়েছিল আবহাওয়া অফিস। কিন্তু নিম্নচাপটি অভিমুখ কিছুটা পরিবর্তন করে অন্ধ্র থেকে ওড়িশার দিকে সরে আসায় বৃষ্টির মাত্রা আরও বাড়তে পারে বলেই খবর।
আগামী ১১-১৩ অক্টোবরের মধ্যে কখনও কখনও মাঝারি মাত্রায় বৃষ্টিও হতে পারে বলে আগেই জানিয়েছিল আলিপুর আবহাওয়া দফতর। রবিবার অধিকর্তা গণেশ দাস এ খবরেই শিলমোহর দিয়েছেন। এ বছর পঞ্চমী পড়েছে ১৪ অক্টোবর, রবিবার। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে ওইদিনের পর থেকেই আবহাওয়ার উন্নতি হওয়ার আশা করছেন আবহাওয়াবিদরা। কারণ বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপটি তৈরি হচ্ছে, তা পুজো শুরু হওয়ার আগে কেটে যাবে বলে এখনও আশা করছেন তাঁরা।
তবে সময়টা যেহেতু অক্টোবর, তাই অনিশ্চয়তা যে একটা থেকেই যাচ্ছে, তা মানছেন আবহাওয়াবিদরা। বছরের এই সময়ে বঙ্গোপসাগরে কোনও নিম্নচাপ তৈরি হলে, তা শক্তিশালী হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আবহাওয়া দপ্তর অবশ্য রবিবার পর্যন্ত নিম্নচাপটির আরও শক্তিশালী হওয়ার কথা জানালেও, ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার কোনও সতর্কবার্তা জারি করেনি। তবে আরব সাগরে তৈরি হওয়া একটি নিম্নচাপ শক্তিশালী হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে চলেছে, সেই আশঙ্কার কথা আগেই জানানো হয়েছে।
গণেশবাবু জানিয়েছেন, একই সময়ে কাছাকাছি এলাকার মধ্যে দুটি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়ার নজির আবহাওয়া বিজ্ঞানে নেই। সেই ভরসায় আবহাওয়াবিদরা আশা করছেন, বঙ্গোপসাগরের এই সিস্টেমটি খুব শক্তিশালী হয়ে শেষ পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে না।
গত শুক্রবার কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছিল, নিম্নচাপটির অভিমুখ উত্তর অন্ধ্র-দক্ষিণ ওড়িশা উপকূলের দিকে হবে। এদিন অভিমুখ কিছুটা পরিবর্তন করে তা পুরোপুরি ওড়িশা উপকূলের দিকে হয়েছে। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, অন্ধ্র উপকূলের দিক থেকে ওড়িশা উপকূলের দিকে নিম্নচাপ সরে এলে, দূরত্ব কমার কারণে এর প্রভাব গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে বেশি পড়বে।
নিম্নচাপটি এখনও উপকূল থেকে অনেক দূরে থাকায় অভিমুখ আরও পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা বাতিল করছেন না আবহাওয়াবিদরা। সেক্ষেত্রে নিম্নচাপটি পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশ এমনকী মায়ানমার উপকূলের দিকেও যেতে পারে। বাংলাদেশ-মায়ানমার উপকূলের দিকে চলে গেলে স্বাভাবিকভাবে এখানে নিম্নচাপের প্রভাব বিশেষ পড়বে না। তবে সেই সম্ভাবনা খুবই কম। বরং ওড়িশা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের দিকে আসার সম্ভাবনাই বেশি। সেক্ষেত্রে এর প্রভাব উপকূলবর্তী দুই ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় বেশি পড়বে। কলকাতা উপকূল সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় এখানেও বৃষ্টি হবে।
গত কয়েক বছর ধরেই পুজোর আগে কিংবা পুজোর সময়ে বৃষ্টি হয়েছে। তবে এবার শারদোৎসব একটু দেরিতে হওয়ায় অনেকেই আশা করেছিলেন, বৃষ্টিহীন থাকবে উৎসবের দিনগুলি। কিন্তু পুজোর আগেই নিম্নচাপ দানা বাঁধায় উৎসবের সময়ে বৃষ্টির একটা সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে।