লোকসভা ভোটের পর ‘বিজেপি বাংলা এবং বাঙালি বিরোধী দল’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক সম্মেলনে ফের সেই ইস্যুতেই সরব হলেন তৃণমূল নেতা তথা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দফতরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী ব্রাত্য বসু।
গেরুয়া শিবিরকে কটাক্ষ করে ব্রাত্য বসু বলেন, ‘সম্প্রতি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট একজন বাঙালিকে তার মন্ত্রিসভায় রাখছেন, তার নাম অরুণ মুজুমদার। এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশ্ব বাংলার প্রতিফলন। বাংলার মুখ দিয়ে দেশকে দেখা, দেশের মাধ্যমে পৃথিবীকে দেখা, আন্তর্জাতিক স্তরে আজ বাংলাকে তুলে ধরা হচ্ছে।’ তাঁর অভিযোগ, বহিরাগতদের দিয়ে বাংলাকে পরিচালনার ষড়যন্ত্র চলছে। অন্য রাজ্যের অবাঙালি মুখকে নেতা করে, মুখ্যমন্ত্রীর মুখ করে বাংলায় আনা হচ্ছে। এরপরেই তাঁর কটাক্ষ, যাঁরা বাঙালি সংস্কৃতি জানেন না তাঁদের হাতে বাঙালি জাতিকে নিয়ন্ত্রিত হতে হবে এই দুর্দশা এখনও আসেনি।
মোদী জমানায় দিল্লীতে কোনও বাঙালি পূর্ণমন্ত্রী নেই বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন ব্রাত্য। তিনি বলেন, ‘৭ বছর ধরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় কোন পূর্ণ বাঙালি ক্যাবিনেট মিনিস্টার নেই, হাফ প্যান্ট পড়া মন্ত্রীদের রেখে দিয়েছে।’ নাম না করে এভাবেই বাবুল সুপ্রিয়দের কটাক্ষ করেন ব্রাত্য বসু। এ রাজ্যে অবাঙালি মন্ত্রী প্রতিনিধিত্ব করলেও উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত থেকে কেন কোনও বাঙালি মন্ত্রী হন না সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি। ব্রাত্যর কথায়, ‘২০১১ সালে রাজপাল সিং আমাদের এখানে মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। অথচ অন্য কোন রাজ্যে বাঙালিকে মন্ত্রিত্ব দেওয়া হয়েছে দেখতে পারবেন না।’ বিজেপিকে বাংলা বিরোধী বলে দাগিয়ে ব্রাত্য আরও বলেন, ‘ইংরেজদের মুচলেকা দেওয়া সাভারকরের নামে আন্দামানের সেলুলার জেলের নামকরণ হয়। কিন্তু সেখানেই বন্দী থেকে আমরণ লড়াই করে যাওয়া বাঙালি বিপ্লবী বারীণ ঘোষ, উল্লাসকর দত্ত, ইন্দুভূষণ রায়দের নামে সেলের নাম করা হয় না।’
নাম না করে অমিত শাহকেও তীব্র কটাক্ষ করেন ব্রাত্য বসু। স্পষ্ট বলেন, ‘যাঁরা বাংলা ও বাঙালির ইতিহাস জানেন না, তাঁরাই অন্য মূর্তির গলায় মালা দিয়ে বলবেন বিরসা মুণ্ডার গলায় মালা দিলাম। আমাদের মাথার ওপর অন্য রাজ্যের নেতারা এসে বসবেন, শাসন করবেন আর তারা বলবেন, রবীন্দ্রনাথের জন্ম হয়েছিল বোলপুরে। এটা বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা বহিরাগত তাণ্ডবেরই পরম্পরা। খোঁজ নিয়ে দেখুন, ওই দিন ভাটপাড়ায় উল্লাস হয়েছিল।’ কেউ যদি এসে বাঙালি মনীষীদের অপমান করেন তাহলে বাঙালিরা তাদের ছেড়ে দেবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন ব্রাত্য।