আইএসএল শুরুর ঠিক আগে ফের দুর্যোগের কালো মেঘ ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের আকাশে। যখন কোনও ঐতিহ্যশালী সংস্থা বা মাধ্যমে নতুনত্বের আবির্ভাব ঘটে, তখন তা নিয়ে একাধিক জটিলতা ও ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হয়। তা সেই নতুনত্ব যতই ভালো হোক না কেন। টুর্নামেন্টের আগে সেই একই অবস্থা হয়েছে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের ক্ষেত্রে। নয়া ইনভেস্টর শ্রী সিমেন্ট আসার পর থেকেই ক্লাবে একপ্রকার কড়া অবস্থান জারি করে রেখেছে তারা। এর ফলে কার্যত ক্ষমতাহীন হয়ে পড়েছেন ক্লাবকর্তারা।
কিন্তু এই নিয়ে আবারও ভুল বোঝাবুঝি করতে শুরু করেছে কিছু সংবাদমাধ্যম। গত কয়েক মাসে একাধিক সংবাদমাধ্যম রিপোর্ট করেছে বেশ মন ঘোরানো শিরোনাম দিয়ে। এমনকি গতকালও কিছু সংবাদমাধ্যম রিপোর্ট করে লিখেছে ইস্টবেঙ্গল ক্লাব নাকি বিক্রি করতে চলেছে শ্রী সিমেন্ট। এই নিয়ে লাল-হলুদ সমর্থকদের মধ্যে চিন্তার অবকাশ এসে গিয়েছিল। কিন্তু এবার সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে দিয়েছেন ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কর্তা ও ইনভেস্টররা। শতবর্ষের ক্লাবে কোনওরকম আঁচ পড়বে না, এই বিষয়েই গ্যারান্টি দিয়েছেন ইনভেস্টর শ্রী সিমেন্ট।
ইনভেস্টরের প্রতিনিধিরা স্পষ্ট জানিয়েছে, ক্লাবকে বিশ্বমানের জায়গায় নিয়ে যাওয়ার যে প্রতিশ্রুতি তারা দিয়েছেন, সেটি না করে তারা ইস্টবেঙ্গল ছাড়বেন না এবং ক্লাবের কর্মকর্তাদের সাথে সহযোগিতা করতেও তারা ইচ্ছুক। এই নিয়ে এক প্রতিনিধি বলেছেন, “ক্লাব ও ইনভেস্টর বিরোধী এই ধরণের খবর দেখে আমরা সত্যিই অবাক। এই ধরণের কোনওরকম মনোবাঞ্চনা আমাদের নেই। ক্লাবকর্তাদের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে আমরা ক্লাবের মানোন্নয়ন করতে চাই। মানোন্নয়নকে কোনওভাবেই বিক্রির সাথে তুলনা করবেন না।”
যদিও ক্লাবের যাবতীয় বিষয় ও পরিকাঠামো শ্রী সিমেন্ট ইস্টবেঙ্গল ফাউন্ডেশনের অধীনে রাখতে চায় নয়া ইনভেস্টর, সে নিয়েও বার্তা দিয়েছেন সেই প্রতিনিধি। এই বোর্ড অফ ডিরেক্টরসে ইনভেস্টরের আটজন ও ক্লাবের দুইজন প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন। আপাতত ক্লাবের প্রতিনিধি কারা থাকবেন, সেই নিয়ে জল্পনা থাকলেও তা দ্রুত মিটে যাবে বলেই আশ্বাস দিয়েছেন ইনভেস্টর।
এদিকে সদস্য ও সমর্থকদের ক্লাবে প্রবেশ নিয়ে ইনভেস্টরদের বক্তব্য, ক্লাবে যেহেতু আর কয়েক দিনের মধ্যেই রেনোভেশনের কাজ শুরু হবে, তাই এই মুহুর্তে বেশি লোকজনকে ক্লাবে আনতে চাইছেন না তারা। যদিও আশ্বাস দিয়েছেন, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে একেবারে ঝকঝকে এক ক্লাব তাঁবুকে দেখতে পাবেন সমর্থকরা। এর পাশাপাশি আজকে এক জনপ্রিয় লৌহ প্রস্তুতকারক সংস্থাকে নিজেদের কো স্পনসর হিসেবে আনল এস সি ইস্টবেঙ্গল।
সব মিলিয়ে, মানোন্নয়নকে বিক্রির সাথে তুলনা করাটা একপ্রকার মূর্খামি। মানোন্নয়নের জন্য যদি ক্ষমতার বদল হয়, তাতে ক্ষতি কি! আজ কলকাতার অন্য বড় ক্লাব মোহনবাগান এটিকের সাথে সংযুক্ত হওয়ার জেরে আদতে লাভ হয়েছে মোহনবাগানেরই। ক্লাবে এত বড় মাপের স্পনসর এসেছে, ক্লাবের মান বাড়ছে আরও বেশি। হয়ত সংযুক্তিকরণের প্রক্রিয়াটি বেশ বিতর্কিত ছিল। কিন্তু অস্বীকার করে লাভ নেই, মোহনবাগানের উন্নয়নের জন্য এই সংযুক্তিকরণ দরকার ছিল। এদিকে, ইস্টবেঙ্গলের ক্ষেত্রে সংযুক্তিকরণ না হলেও, নতুন ইনভেস্টর যে নিজেদের ব্যবসায়িক বুদ্ধির মাধ্যমে ক্লাবেরই উন্নতিসাধন করতে চাইছে, তা পরিষ্কার।