একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বাংলায় ক্ষমতা দখলের খোয়াব দেখছে গেরুয়া শিবির। কিন্তু আদতে দেখা যাচ্ছে, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে ততই প্রকাশ্যে আসছে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ, নেতা-কর্মীদের চাপা অসন্তোষ। এই আবহেই আগামী ৫ এবং ৬ নভেম্বর দুদিনের বঙ্গ সফরে আসছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আগে ঠিক ছিল আগামী ৬ এবং ৭ নভেম্বর এই দুই জেলায় কর্মী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করতে রাজ্য আসবেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা। কিন্তু তা বাতিল হয়। পরিবর্তে একদিন আগেই বঙ্গ সফরে আসছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আর এবারে তাঁর সফর এমন একটা সময়ে হতে চলেছে যখন বঙ্গ বিজেপির অন্দরে কার্যত কুরুক্ষেত্র বেঁধে গিয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে এই কুরুক্ষেত্র কী আদৌ সামাল দিতে পারবেন বিজেপির চাণক্য!
প্রসঙ্গত, এই মুহূর্তে অদৃশ্যভাবে বিজেপি-আরএসএস দ্বন্দ্ব চলছে রাজ্যে। আরএসএস কার্যত বিজেপির ভিত্তিভূমি। প্রথমটি ধর্মীয়-সামাজিক সংগঠন ও দ্বিতীয়টি রাজনৈতিক দল। আরএসএসের ওপর ভর দিয়েই দেশের নানা রাজ্যে নিজেদের ব্যাপ্তি ঘটিয়েছে বিজেপি। কিন্তু মোদী জমানায় সেই সঙ্ঘের সঙ্গেই অদৃশ্যভাবে একটা বিবাদ চলছে বিজেপির। আরএসএস বরাবরই চেয়ে এসেছে বিজেপিকে ও বিজেপি শাসিত সরকারগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর মোদী-শাহের বিজেপি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তার উল্টো পথে হেঁটেছে। এখনও সেই বিবাদ আবারও মাথাচাড়া দিয়েছে। মোদী সরকারের বিলগ্নীকরণ ও বেসরকারিকরণ নীতি না পসন্দ সঙ্ঘের। মোদির বিদেশনীতি নিয়েও সঙ্ঘের আপত্তি রয়েছে। আর এই বিবাদের প্রভাব পড়ছে রাজ্যে রাজ্যে থাকা বিজেপির সংগঠনেও।
বাংলায় রাজ্য বিজেপির সভাপতি পদে বসা দিলীপ ঘোষ আদ্যপ্রান্ত সঙ্ঘের লোক। তাঁর আমলেই রাজ্য বিজেপির বাড়বাড়ন্ত। কিন্তু বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে রিপোর্ট পৌঁছেছে যে দিলীপ ঘোষ যেভাবে রাজ্যে দলকে চালাচ্ছেন, যেভাবে মারবো-ধরবো-কাটবো-পিটবো বলে হুমকি দিচ্ছেন তাতে দলের ভাবমূর্তি তো ধাক্কা খেয়েইছে, সেই সঙ্গে মানুষ বিজেপি থেকে মুখ ফেরাতে শুরু করে দিয়েছে। দুর্নীতি, চারিত্রিক অধ্বপতন কার্যত গোটা দলকে গ্রাস করেছে। ভিনদল থেকে আসা নেতা, সাংসদ ও বিধায়কদের কার্যত দলে কোনও গুরুত্বই দেওয়া হচ্ছে না। এই ভাবে চলতে থাকলে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে দলের যে মুখ থুবড়ে পড়ার হাল হতে চলেছে তা নিশ্চিত। সেই ড্যামেজ কন্ট্রোলেই এবার বাংলায় মাঠে নামতে চলেছেন অমিত। কিন্তু প্রশ্ন, তাতে কী আদৌ কোনও লাভ হবে? এর উত্তর সময়ই বলবে।