বুধবার থেকে বিহারে শুরু হয়েছে বিধানসভা নির্বাচন। গতকাল ছিল প্রথম দফার ভোটগ্রহণ। যে কারণে গোটা দেশের নজর ছিল বিহারের দিকে। মাস্ক ও গ্লাভস বিলিয়ে, ঘণ্টায় ঘণ্টায় বুথ স্যানিটাইজ করে করোনা সংক্রমণের মাঝে ভোট আয়োজনে সসম্মানে উতরে গেল জাতীয় নির্বাচন কমিশন। পাশাপাশি যেটা নজরে পড়ল, তা হল ভোটারদের অদম্য উৎসাহ। সাধারণত রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলে থাকেন, যত বেশি মানুষ ভোট দিতে কেন্দ্রে যাবেন, বুঝতে হবে যে ততটাই পট পরিবর্তনের সম্ভাবনা বাড়তে চলেছে।
এই পরিস্থিতিতেই প্রথম দফায় বিহারের ১৬ জেলার ৭১টি কেন্দ্রের ভোটাররা তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে ১ হাজার ৬৬ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ করলেন। এর মধ্যে রয়েছেন ৮ জন মন্ত্রী। প্রথম দফায় ৩৩৭১টি বুথে মোট ভোট পড়েছে ৫৪.২৬ শতাংশ। ভোটার সংখ্যা প্রায় ৭ কোটি ১৮ লক্ষ। চইনপুর বিধানসভা কেন্দ্রে সর্বোচ্চ ৬৩.৩৩ শতাংশ ভোট পড়েছে। উল্লেখ্য, ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে এই হার ছিল ৫৩.৫৪ শতাংশ। করোনা আবহের মাঝেও যে এত ভোট পড়েছে, তা কিছুটা হলেও চিন্তায় রেখেছে নীতীশ কুমারকে।
জঙ্গলরাজের স্মৃতিকে পিছনে ফেলে ফের বিহার কাঁপাচ্ছেন এক যাদব নেতা। নীতিশের ঘুম উড়িয়ে মানুষের মন জয় করতে ময়দানে জোর কদমে কশরত করে চলেছেন লালুপুত্র তেজস্বী। বিরোধী মহাজোটের তরফে তিনি মুখ্যমন্ত্রী পদ প্রার্থী। নীতীশকে তাই সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানাতে তেজস্বীর বাজি তরুণ প্রজন্ম। এবং গত কয়েক দিনে, তাঁর জনসভার জন প্লাবন দেখে বলাই যায় যে নীতীশকে কড়া চ্যালেঞ্জ পেশ করতে সক্ষম হয়েছেন তেজস্বী।
এদিকে তারুণ্য যে বিহারের রাজনীতির পরবর্তী পথ প্রদর্শক, তা বুঝেছে কম বেশি সব রাজনৈতিক দলই। তাই তো বুধবার অনুষ্ঠিত হওয়া প্রথম দফার ভোটে দেখা যায়, ১ হাজার ৬৬ জন প্রার্থীর মধ্যে প্রায় ৫২ শতাংশ প্রার্থীর বয়স ৪০ বছরেরও কম। এই তারুণ্যের ভিড়ে বর্ষীয়ান নীতিশ এবং তাঁর অভিজ্ঞ পর্ষদরা কি টিকে থাকতে পারবেন, এখন এটাই হল আসল প্রশ্ন।
এদিকে এই প্রথমবার বিহারের নির্বাচনী ময়দানে নেই সেরাজ্যের পরিচিত তিন জন বর্ষীয়ান নেতা। লালুপ্রসাদ আপাতত বন্দি রয়েছেন রাঁচির জেলে। প্রাক্তন জেডিইউ নেতা শরদ যাদব আপাতত অসুস্থ। তাঁর নিজের মেয়ে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। এছাড়া কয়েকদিন আগেই প্রয়াত হন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিহারের মহাদলিতদের মুখ হিসাবে পরিচিত রাম বিলাস পাসোয়ান। এই পরিস্থিতিতে ব্যটন ধরেছেন তেজস্বী-চিরাগরা।
তেজস্বী নিজের প্রচারের পোস্টারে রাখেননি লালুপ্রসাদ বা রাবরি দেবীর ছবি। এই বিষয়ে বিজেপি-জেডিইউ যতই আক্রমণ করুক তেজস্বীকে, তিনি যে ঠিক ‘চাল’টা খেলে গিয়েছেন, তা বুঝতে বাকি নেই কারোর। এই দীর্ঘ ১৫ বছরে নীতিশ লালুর ‘জঙ্গলরাজ’এর ভয় দেখিয়ে ভোট চেয়েছেন বিহারবাসীর কাছে। কিন্তু এবার সেই সুযোগ নেই। ময়দানে আছেন নয়া খেলোয়াড়। যাঁর তারুণ্যতে মজেছে রাজ্যে যুব সমাজ। লালুর প্রতি ভীতি উধাও, কারণ লালু প্রচারের আলোতেই নেই।
নীতীশের বদলে মানুষ চাইছে তেজস্বীর তারুণ্য। ফের লালুকে ফেরাতে ভোটাররা চাইছেন না। তাছাড়া দুর্নীতির দায়ে হাজত বাস করা লালুকে ঠিক স্বচ্ছতার প্রতীকও বলা যা না। সেই ক্ষেত্রে নীতীশের ভাবমূর্তি লালপ্রসাদকে টেক্কা দিয়ে বেরিয়ে যেত। তাই খুবই সূক্ষ্ম ভাবেই প্রচারের আলো থেকে লালু প্রসাদকে দূরে রেখে নীতীশের বিরুদ্ধে ঘুঁটি সাজিয়েছেন তেজস্বী এবং আরজেডি।
বিহারের রাজনীতিতে জাত-পাতের সমীকরণ চিরকালই ছিল। এই নির্বাচনেও তার কোনও ব্যতিক্রম নেই। তবে তেজস্বী যেটা করতে সক্ষম হয়েছে, তা হল চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতির গান গেয়ে সব ধর্ম, জাত নির্বিশেষে যুব সম্প্রদায়কে এক ছাতার তলায় আনতে পেরেছেন। সেখানে তেজস্বী যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও চ্যালেঞ্জ জানাতে প্রস্তুত, অন্তত বিহারে। সেই ক্ষেত্রে নীতিশ কিন্তু পিছিয়ে পড়েছেন অনেকটাই।