টানা ১৫ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ার পর গত মঙ্গলবারই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন হাথরসের নির্যাতিতা দলিত তরুণী। গোটা সপ্তাহ জুড়ে এই গণধর্ষণ ও মৃত্যুকে ‘পরিবারের সম্মান রক্ষায় খুন’ বা ‘অনার কিলিং’ বলে প্রচারের চেষ্টা চলছিলই। এবার তার পিছনে আরএসএসের হাত রয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠল। রবিবার এবং তার আগেও হাথরসের বুল গড়হী গ্রামে ঠাকুর তথা উচ্চবর্ণের লোকেরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, অভিযুক্তেরা নিরপরাধ। নির্যাতিতার পরিবারই মিথ্যে বলছে।
উচ্চবর্ণের সংগঠন রাষ্ট্রীয় সবর্ণ পরিষদের ওই বিক্ষোভে বিজেপির প্রাক্তন বিধায়ক রাজবীর সিংহ পালোয়ানও হাজির ছিলেন। এখন জানা গিয়েছে, পরিষদের জাতীয় অধ্যক্ষ পণ্ডিত পঙ্কজ ধবরৈয়া ২০০২ থেকে ২০১৬, টানা ১৪ বছর আরএসএস-এর প্রচারক হিসেবে কাজ করেছেন। তাঁর সঙ্গে আরএসএস-এর যোগাযোগের কথা স্বীকার করে নিয়ে পঙ্কজ এক সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমি এক সময় আরএসএস-এর হয়ে কাজ করতাম। তবে অনেক দিন আগে। এখন সবর্ণ পরিষদের অধ্যক্ষ হিসেবে কাজ করি। আমাদের কাজ হল সংরক্ষণ এবং তফসিলি জাতি-উপজাতি নির্যাতন প্রতিরোধ আইনের বিরুদ্ধে প্রচার।’
প্রিয়াঙ্কা গান্ধী অভিযোগ করেছেন, ‘উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কি নির্যাতিতার পরিবারের কথা শুনবেন? ন্যায়বিচারের প্রথম ধাপ হল নির্যাতিতের কথা শোনা। কিন্তু বিজেপি আজও ওই তরুণীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।’ তবে পঙ্কজের দাবি, ‘ওই পরিবার মিথ্যে কথা বলছে। যে চার জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে, তাদের মধ্যে তিন জন ঘটনাস্থলেই ছিল না। অন্য জনের সঙ্গে ওই তরুণীর বন্ধুত্ব ছিল। মেয়েটির বাবা তাকে মারধর করে। এর পরে মেয়েটির মা ও ভাই অভিযোগ তুলেছে। মেয়েটির ভাই ও ছেলেটির নাম এক। মেয়েটি মৃত্যুর আগে ওই নামের ব্যক্তির বিরুদ্ধে তাঁকে খুনের চেষ্টার অভিযোগ তুলেছিল। এখন সেই ব্যক্তিটি কে, তার জন্যই আমরা তদন্ত চাই। সেই কারণেই আমরা সিট, নার্কো পরীক্ষার দাবি করেছিলাম। রাজ্য সরকার আমাদের সহযোগিতা করেছে।’
এখানেই প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা। বিরোধী নেতাদের অভিযোগ, এই সবর্ণ সমাজ যা চাইছে, কার্যত সেটাই যোগী সরকার মেনে নিয়েছে। সবর্ণ সমাজের দাবি মেনেই পরিবারের নার্কো পরীক্ষার সুপারিশ করেছে সিট। পঙ্কজের নেতৃত্বেই রবিবার হাথরসে সাত-আটশো লোক জড়ো হয়েছিল। তিনি গ্রামের বাইরে থেকে ভীম আর্মির নেতা চন্দ্রশেখর আজাদকে হুমকি দিয়েছেন। কিন্তু যোগী আদিত্যনাথের পুলিশ তাঁর চারপাশেই নিরাপত্তার বলয় তৈরি করে রেখেছিল। আজাদদের বিরুদ্ধে ১৪৪ ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলা হলেও সবর্ণ পরিষদের বিরুদ্ধে মামলা হয়নি।
জাতীয় মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী সুস্মিতা দেব বলেন, ‘‘নির্যাতিতার পরিবার কর্মরত বিচারপতির নেতৃত্বে বিচারবিভাগীয় কমিশনের তদন্তের দাবি জানিয়েছে। কারণ, সিটের পুলিশ অফিসারেরা ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সিবিআই এখনও মাঠে নামেনি।’ এদিকে ‘প্রাক্তন আরএসএস প্রচারকঃ পঙ্কজ নিজেই হাথরসে গোষ্ঠী সংঘর্ষের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বাইরে থেকে রাজনীতিকরা এসে উস্কানি দিচ্ছেন। গোটা জেলার মানুষ আমার কথা শোনেন। আমি যদি বলে দিই হিংসা হয়ে যাক, তা হলে রক্ত বইবে। সকলেরই ক্ষোভ রয়েছে।’