টানা ১৫ দিন ধরে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে হার মেনেছেন চার উচ্চবর্ণের ব্যক্তির হাতে গণধর্ষণের শিকার হওয়া উত্তরপ্রদেশের হাথরসের দলিত মহিলা। মঙ্গলবারই দিল্লীর সফদর জং হাসপালাতে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। আর তারপর থেকেই তোলপাড় গোটা দেশ। এবার হাথরসের নির্যাতিতা দলিত যুবতীর মৃত্যুতে সরাসরি বিজেপি শাসিত যোগী প্রশাসনকে কাঠগড়ায় তুললেন কংগ্রেস সুপ্রিমো সোনিয়া গান্ধী।
বুধবার কংগ্রেসের অফিশিয়াল টুইটার হ্যান্ডেল থেকে সোনিয়ার একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে। সেখানে কংগ্রেস সভানেত্রী বলেন, ‘দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ এই ঘটনায় বিষণ্ণ। ক্ষুব্ধও। হাথরসের কন্যাকে যে পৈশাচিক অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছিল, তা আমাদের সমাজের একটি কলঙ্ক।’ যোগী সরকারকে চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রামণ করে সোনিয়া বলেন, ‘হাথরস গণধর্ষণের নির্যাতিতা নির্মম একটা সরকারের কারণেই মারা গিয়েছেন।’ যোগী প্রশাসনের বিরুদ্ধে চরম গাফিলতির অভিযোগ আনেন কংগ্রেস সুপ্রিমো।
কংগ্রেস সভানেত্রীর অভিযোগ, ‘গোটা ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার একটা চেষ্টা হয়েছিল। মেয়েটির সময়ে চিকিত্সার ব্যবস্থা করা হয়নি। যে কারণে হাথরসের কন্যা আজ আর আমাদের মধ্যে নেই।’ ভিডিয়ো বার্তায় তাঁর সংযোজন, ‘আমি একটা কথা পরিষ্কার করে বলতে চাই, হাথরসের নির্ভয়া মারা যাননি। একটা নির্মম সরকার, তার প্রশাসন, সরকারের গাফিলতি এর জন্য দায়ী।’ অভিযোগের সুরে তিনি আরও বলেন, ‘যখন তরুণী বেঁচে ছিলেন, তাঁর কথা শোনা হয়নি। তাঁকে সুরক্ষা দেওয়া হয়নি। এমনকী মৃত্যুর পরেও মেয়েটি তাঁর বাড়ির মাটি থেকে বঞ্চিত হল। পরিবারের হাতে দেহ তুলে দিতে অস্বীকার করা হয়। তাঁর মা কান্নাভেজা চোখে মেয়ের শেষকৃত্যে থাকার সুযোগ পাননি। জোর করে দেহ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।’ সোনিয়ার দাবি, ‘এটা মস্ত বড় অপরাধ।’
উত্তরপ্রদেশ পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, গোটা পরিবারকে ঘরে আটকে রেখে মঙ্গলবার গভীর রাতে হাথরসের নির্যাতিতার দেহ সত্কার করেছে পুলিশ। এ প্রসঙ্গে সোনিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘মৃত্যুর পরেও ব্যক্তির মর্যাদা যাতে ক্ষুণ্ণ না হয়, তা দেখা কর্তব্য। হিন্দুধর্মেও তা বলা আছে। কিন্তু, পুলিশ বাহিনীকে কাজে লাগিয়ে অনাথের মতো তরুণীর সত্কার করা হয়েছে। এটা কী ধরনের ন্যায়বিচার? কী ধরনের সরকার?’ কংগ্রেসের তরফে হাথরসের নির্যাতিতার ন্যায়বিচার দাবি করেন সোনিয়া। তিনি বলেন, ‘ভারত সবার দেশ। প্রত্যেকের মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। আমরা দেশ ও সংবিধানকে ভাঙার সুযোগ বিজেপিকে দেব না।’