ইতিমধ্যেই কেন্দ্রের নয়া কৃষি বিলের প্রতিবাদে দেশজোড়া বিক্ষোভে সামিল হয়েছে কৃষকেরা। ‘বলপূর্বক’ সংসদে এই বিল পাশ করালেও রোজই বিরোধীদের তোপের মুখে পড়ছে বিজেপি সরকার। কংগ্রেস-সহ অন্যান্য বিরোধীরা এই বিলকে ইতিমধ্যেই চূড়ান্ত ভাবে ‘কৃষক বিরোধীও’ আখ্যা দিয়ে প্রতিবাদে সামিল হয়েছে। এদিকে নতুন কৃষি বিলে কৃষকদের উদ্বেগের অন্যতম প্রধান কারণ যে নূন্যতম সহায়ক মূল্য তা বিলক্ষণ বুঝেছে কেন্দ্র।
এই নূন্যতম সহায়ক মূল্যের হাত ধরেই কৃষি পণ্যে বাঁধা দাম পান কৃষকেরা। কিন্তু বর্তমানে এই রাস্তাতেই বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে কেন্দ্রের নয়া কৃষিবিল। উল্টো অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের তালিকা থেকে চাল, ডাল, পেঁয়াজ সহ আরও একাধিক পণ্যকে বাদ দেওয়া হয়েছে নতুন কৃষি বিলে। যার ফলে অচিরে কালোবাজারি বাড়ার সাথে সাথে একাধিক পণ্যে কৃষকেরা যে নূন্যতম সহায়ক মূল্যও পাবেন না বলেই মনে করছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা।
ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা বর্তমানে সরকারের প্রধান মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে কৃষকের উৎপাদন ব্যবসা ও বাণিজ্য (প্রচার ও সুবিধাদি) সংক্রান্ত নয়া বিল। কৃষকদের আশঙ্কা এই নতুন বিলের হাত ধরে এমএসপি ও সরকারি মান্ডি অবলুপ্তির চেষ্টা করছে সরকার। যদিও সরকারের পাল্টা বক্তব্য এই আইন বলে এখন থেকে সরকারি মান্ডির পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থার কাছেও কৃষি পণ্য বেচতে পারবেন কৃষকেরা। যদিও বিশেষজ্ঞদের ধারণা এর ফলে আখেড়ে ক্ষতিই হবে ছোট কৃষকদের। আরও বেশি করে হাত শক্ত হবে পুঁজিবাদী ও বেসরকারী সংস্থাগুলির।
এদিকে চাপের মুখে পড়ে গম-সহ ৬টি রবিশস্যে নূন্যতম ৫০ টাকা করে সহায়ক মূল্য(এমএসপি) বাড়ানোর ঘোষণা করেন নরেন্দ্র মোদী। যদিও আইন কার্যকরী হয়ে গেলে ভবিষ্যতে সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন কতটা হবে তা সহজেই অনুমেয়। বর্তমানে ২২টি কৃষি পণ্যে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের নিশ্চয়তার দাবিতে উত্তাল হচ্ছে হরিয়ানা ও পাঞ্জাবের বিস্তৃর্ণ অংশ। দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ছে কৃষক আন্দোলন।
ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা নতুন বিলকে হাতিয়ার করে মোদী সরকার বেসরকারি কর্পোরেট সংস্থার চুক্তি চাষে বৈধতা দিতে চাইছে। একইসাথে সরাসরি চাষিদের থেকে ফসল কেনার সুযোগ করে দিয়েছে। মান্ডির বাইরে ফসল বিক্রিতেও দেওয়া হয়েছে সবুজ সংকেত। এমতাবস্থায় বিরোধীদের দাবি, এটা কার্যকরি হলেও বেসরকারি সংস্থাগুলি যাতে অন্তত ন্যূনতম সহায়কমূল্য (এমএসপি) দেয় তার নিশ্চয়তা দিক সরকার। কিন্তু দাবির সামনে দাঁড়িয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে মোদী সরকার।
বিরোধীদের স্পষ্ট দাবি বিপণন যেহেতু সম্পূর্ণ লগ্নিভিত্তিক, এতে কৃষকের জায়গা কোথাও নেই, তাই এর লাভের গুড় পুরোটাই যাবে কর্পোরেটের ঘরে। আর এই বিলের হাত ধরে সেই রাস্তাই পরিষ্কার করতে চাইছে মোদী সরকার। এদিকে ইতিমধ্যেই এই কৃষি বিলের প্রতিবাদে আজ ২৫ সেপ্টেম্বর ভারত বন্ধে সামিল হয়েছে একাধিক কৃষক সংগঠনের যৌথ মঞ্চ কিষাণ সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি। এই বনধ সমর্থন করছে সিটু, আইএনটিইউসি, এআইটিইউসি-সহ একাধিক কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনগুলি। কংগ্রেস, তৃণমূল ও বামেদের ছাত্র সংগঠনগুলিও এই বনধে সমর্থন জানিয়েছে।